‘হুমকির চিঠিটি’ লিখেছেন পাকিস্তানের দূত: জিও নিউজ
পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে এক কূটনৈতিক চিঠি। পার্লামেন্টে অনাস্থার মুখে পড়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একে তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ’ হিসেবে দাবি করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরান খান স্পর্শকাতর কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
২৭ মার্চ দলের এক সমাবেশে ওই ‘হুমকির চিঠি’ দেখান ইমরান খান। নামপ্রকাশ না করে কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে গত বুধবার জিও নিউজ জানায়, একটি বিদেশি রাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক দূত চিঠিটি লিখেছেন।
সূত্রগুলো জানায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দূত পাকিস্তানে চিঠিটি পাঠান। ইমরান খান চিঠির বিষয়টি সামরিক নেতৃত্বকে অবহিত করেন। বলা হয়, কূটনৈতিক ওই চিঠিতে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল।
জিও টিভির এক অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি হাইকমিশনার আবদুল বাসিত বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের দূতের নেওয়া নোটের প্রতি হয়তো ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই দূতের নিজস্ব মূল্যায়নও থাকতে পারে।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্লামেন্টের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে চিঠিটি উত্থাপন করা হবে। তবে যে দেশটি পাকিস্তানকে হুমকি দিয়েছে, তাদের নাম জানানো হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। কারণ, এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি জড়িত।
ওই ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আসাদ উমর বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে—যদি অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়, পাকিস্তানের সব দোষ মাফ করে দেওয়া হবে। যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে পাকিস্তানের সমস্যা আরও বাড়বে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকার উৎখাতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রমাণ হিসেবে একটি দেশের পাঠানো ‘হুমকির চিঠির’ কথা উল্লেখ করেন ইমরান। এ সময় তিনি মুখ ফসকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে ফেলেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে পরক্ষণেই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘না, যুক্তরাষ্ট্র নয়, আমি বলতে চাইছি, চিঠিটি অন্য কোনো দেশ থেকে এসেছে।’
কূটনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে পাকিস্তানের ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। দলটির নেতা শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে দেশকে নিশানা বানিয়েছেন ইমরান।
তবে এ ধরনের চিঠি পাঠানোর বিষয়টি জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাচ্ছে—তার এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর কেট বেডিংফিল্ড বলেন, এ ধরনের অভিযোগের একেবারেই সত্যতা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও ইমরান খানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি আমাদের সম্মান ও সমর্থন রয়েছে।’ ইমরান খানের করা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরানে বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধীরা। আগামী রোববারই প্রস্তাবটির ওপর ভোটাভুটি হতে পারে। জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন। জিও নিউজের হিসাব অনুযায়ী, বিরোধীদের হাতে আছে ১৯৯ ভোট।
পাকিস্তানে স্বাধীনতার পর সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে দেশটির কোনো সরকারই পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ভাগ্যেও তেমনটা ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য এই প্রথম রাজনৈতিক বিরোধীদের কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারছে না কোনো সরকার।