মোশাররফ মরে গেলে লাশ টেনে এনে তিন দিন ঝুলিয়ে রাখুন
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ সাজা কার্যকরের আগে যদি মারা যান, তবে তাঁর লাশ টেনে এনে পার্লামেন্ট চত্বরে তিন দিন ঝুলিয়ে রাখার আদেশ দিয়েছেন দেশটির বিশেষ আদালত। মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া রায়ের বিস্তারিত গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। এর থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গত বুধবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় মোশাররফ বলেছেন, ব্যক্তিগত বৈরিতা থেকে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত গত মঙ্গলবার মোশাররফকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একে ‘বেদনাদায়ক’ ঘটনা আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার মানসুর বলেছেন, মোশাররফ ন্যায়বিচার পাননি।
রায়ের বিস্তারিত থেকে জানা যায়, আদালত বলেছেন, ‘তাঁকে (পারভেজ মোশাররফ) গ্রেপ্তারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সর্বোচ্চ চেষ্টার আদেশ দিচ্ছি। আইন অনুযায়ী সাজা কার্যকরে তাদের এই পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি এই সাজা কার্যকরের আগে তিনি মারা যান, তবে তাঁর লাশ টেনে ইসলামাবাদের ডি-চকে (পার্লামেন্ট এলাকায়) এনে তিন দিন ঝুলিয়ে রাখতে হবে।’
এদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা এই আদেশকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এই আদেশ যদি প্রতীকীও হয়ে থাকে, তবে তাও অসাংবিধানিক। কারণ, দেশটিতে একবারই আদালত এক সিরিয়াল কিলারের (ক্রমিক খুনি) প্রকাশ্যে ফাঁসি ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের সামনে তাঁর লাশ ১০০ টুকরা করার আদেশ দিয়েছিলেন। তাও সে সাজা কখনো কার্যকর করা হয়নি।
>ভিডিও বার্তায় পারভেজ মোশাররফ বলেছেন, ব্যক্তিগত বৈরিতা থেকে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মোশাররফের এই রায় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগ। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী মোশাররফের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে, একজন সাবেক সেনাপ্রধান, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, যিনি দেশের জন্য ৪০ বছর কাজ করেছেন ও যুদ্ধক্ষেত্রে দেশের হয়ে লড়েছেন, তিনি কোনোভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারেন না।
এই রায় নিয়ে ইতিমধ্যে বিভক্তিও দেখা দিয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক, পাকিস্তানের লাহোরের হাইকোর্টের বিচারক শহিদ করিম এবং পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ শেট এই সাজার সঙ্গে একমত। তবে দ্বিমত পোষণ করেছেন সিন্ধু হাইকোর্টের বিচারক নাজার আকবর।
মোশাররফ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে রয়েছেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের অনেকেই আমার বিরোধিতা করছেন। এ কারণে মামলাটি আমলে নেওয়া হয়েছে এবং রায় দেওয়া হয়েছে।’
মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া ওই বিচারক প্যানেলের প্রধান বিচারক ওয়াকার আহমেদ শেঠকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। আইনমন্ত্রী ফারোঘ নাসিম গতকাল এ কথা জানিয়েছেন।