পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠের পেছনের খেলোয়াড় কারা

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ স্থানীয় সময় গতকাল রোববার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেন ডেপুটি স্পিকার। এরপর ইমরান খানের সুপারিশে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।

তবে এ ঘটনা এক দিনের নয়। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। এতে দেশটির সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল। ক্ষমতায় টিকতে হলে পাকিস্তানের শাসকদের সেনাবাহিনীকে তুষ্ট করতে হয়। তবে সেনাবাহিনী ইমরানের প্রতি যে সন্তুষ্ট নয়, তার প্রমাণ মিলেছে গত বছর। সে সময় সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়ে ইমরানের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়।

এই টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগ তুলে ইমরানের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয় বিরোধী দলগুলো। গত ৮ মার্চ অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো। একপর্যায়ে ইমরান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টে (এমকিউএম) বিরোধী শিবিরে যোগ দিলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী নেতার

আরও পড়ুন

অনাস্থা প্রস্তাব পাস করা নিয়ে আত্মবিশ্বাস প্রবল ছিল বিরোধীদের। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদের (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি নাকচ করে দেন। শেষ পর্যন্ত পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন ইমরান খান।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ইমরান খান পিটিআই দলকে কেন্দ্র করে দুর্বল জোট তৈরি করেছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এসব রাজনৈতিক নাটকে এই পরিস্থিতি প্রকাশ্যে এসেছে। পাকিস্তানের আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পেছনের খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জিও নিউজ।

শাহবাজ শরিফ

শাহবাজ শরিফ
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ। নির্বাচনী দৌড়ে তিনি অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন। এখন তিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত হতে শাহবাজকে প্রধান প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট। বিপ্লবী ভাষণের জন্য শাহবাজ শরিফের খ্যাতি রয়েছে। কাজের প্রতি তাঁর আসক্তি রয়েছে। একাধিক বিয়ে, লন্ডন ও দুবাইতে বিলাসবহুল বাসভবনসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়।

আরও পড়ুন

আসিফ আলী জারদারি

আসিফ আলী জারদারি
এএফপি ফাইল ছবি

বিত্তবান পরিবারের সদস্য আসিফ আলী জারদারি। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য তাঁর পরিচিতি ছিল। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে বিয়ের পর বেশি আলোচনায় আসেন জারদারি। দুর্নীতির কারণে আসিফ আলী জারদারির আরেক নাম ছিল মি. টেন পার্সেন্ট। জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মাদক চোরাচালান ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি কখনো বিচারের সম্মুখীন হননি।

২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পর পিপিপির সহসভাপতি হন আসিফ আলী জারদারি। একবছর পর পিএমএল-এনের সঙ্গে জোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন তিনি।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি

বিলাওয়াল ভুট্টো
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

মা বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে পিপিপির চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন বেনজির ভুট্টো ও আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আসা ৩৩ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো প্রগতিশীল। নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন বিলাওয়াল। পাকিস্তানের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিজনের বয়স ২২ বছর বা তার নিচে। বিলাওয়াল ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়। যদিও উর্দু ভাষায় দুর্বল হওয়ায় তাঁকে প্রায়ই উপহাসের পাত্র হতে হয়।

মাওলানা ফজলুর রহমান

মাওলানা ফজলুর রহমান
এএফপি ফাইল ছবি

কট্টরপন্থী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। বাম ও ডানপন্থীরাও তাঁর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন। জেইউআই-এফ দলের ডাকে হাজার হাজার মাদ্রাসাশিক্ষার্থী এক হতে পারে। তবে দলটি কখনোই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এককভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও জেইউআই এফ সরকার গঠনে খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করেছে।

ইমরান খানের সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে ফজলুর রহমানের। ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করায় তিনি ইমরানকে ‘ইহুদি’ বলেও উপহাস করেছেন। ইমরান খানও পাল্টা তাঁকে `‘মোল্লা ডিজেল’ বলে ডাকতেন। জ্বালানি লাইসেন্সের দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় ফজলুর রহমানকে এমন নামে ডাকতেন ইমরান।