পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয় না: নওয়াজ
পাকিস্তানের রাজনীতিতে একসময়ের যুযুধান প্রতিপক্ষ দুই দল পিপিপি ও মুসলিম লিগের শীর্ষ নেতারা এক কাতারে এসে কথা বললেন। প্রকাশ করলেন সংহতি। আজ রোববার বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে পাশাপাশি বসেন দুই দলের নেতারা। সম্মেলনের আয়োজক এক সময়ের শাসক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
পাকিস্তানের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডন-এর খবরে বলা হয়, বিরোধী দলগুলোর এই সম্মেলনে যোগ দেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন নওয়াজ) শীর্ষ নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা। তবে অন্য দলের নেতাদের চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, বৃহৎ দুই দল পিপিপি ও পিএমএলের শীর্ষ নেতৃত্বের এক সভায় আসা, আর সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী অবস্থানে এককাট্টা হওয়ার ইঙ্গিত।
পিপিপি নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেন। জারদারি পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর স্বামী। এই সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন নওয়াজ শরিফ। তিনি প্রায় ১০ মাস ধরে আছেন লন্ডনে। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পিপিপির বর্তমান প্রধান ও বেনজীর ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো উপস্থিত ছিলেন। বিলওয়াল গত শনিবার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য নওয়াজকে নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
পিপিপি ও নওয়াজের মুসলিম লিগ—দুই দলই ক্ষমতায় ছিল বিভিন্ন মেয়াদে। আর সেই সময় দুই দল ছিল চরম প্রতিপক্ষ। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে এখন দুই দল এক কাতারে এল। সেখানে যুক্ত হয়ে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানের গণতন্ত্র ভয়াবহ বিপদের মুখে। এখন যদি আমরা কোনো পদক্ষেপ না নিই, তবে কবে নেব?’
সম্মেলনে নওয়াজ বলেন, ‘বারবার পাকিস্তানের মানুষকে গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যখন ভোটের অধিকার থাকে না তখন সমগ্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কে ক্ষমতায় আসবে আর কে আসবে না, তা নির্বাচনের আগেই নির্ধারিত করা হলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। জন রায়কে অগ্রাহ্য করা হয়।’ নওয়াজ বলেন, ‘পাকিস্তানে এই চর্চার পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে। এ দেশের প্রতিটি শিশু জানে যে, কোনো প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয় না।’
এর আগে এই সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে নওয়াজকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি ধন্যবাদ জানান। তিনি নওয়াজের সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। নওয়াজের মেয়ে ও মুসলিম লিগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়মের উদ্দেশে জারদারি বলেন, ‘কী জটিল পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে (মরিয়ম) যেতে হয়েছে তা আমরা দেখেছি। আমরা তাঁর সঙ্গে আছি। আর আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।’ জারদারি ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম এর বিরোধী দলগুলোকে দমনপীড়নের অভিযোগও তোলেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড হয় নওয়াজের। পরে চিকিৎসার জন্য ইমরান খান সরকার তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে লন্ডনে আছেন নওয়াজ। দেশে ফেরার জন্য তাঁকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি ফিরতে পারেননি বলে জানিয়েছে তাঁর আইনজীবী। সব মিলিয়ে গত দুই বছর রাজনৈতিক অঙ্গন ও গণমাধ্যম থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন নওয়াজ। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় আদালতের রায়ে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়েছিল নওয়াজ শরিফকে।