পাকিস্তানে পুলিশের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ‘আজাদি মার্চ’-এ পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। খবর ডন ও জিও নিউজের।
গতকাল বুধবার ইসলামাবাদ অভিমুখে ‘আজাদি মার্চ’ শুরু হলে পিটিআই নেতা-কর্মীরা পাঞ্জাবের বিভিন্ন সড়কে রাখা শিপিং কন্টেইনারগুলো সরানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন শহরে কয়েক পিটিআই নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মির এক টুইটে বলেন, তিনি পিটিআই নেতা শিরিন মাজারির কাছ থেকে একটি বার্তা পেয়েছেন। ওই বার্তায় তিনি দাবি করেছেন, নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ ছিল।
মাজারিকে উদ্ধৃত করে হামিদ মির বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার কেবল আদালতের আদেশের লঙ্ঘনই নয়, পাকিস্তানের নাগরিকদের বিরুদ্ধে (ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) রানা সানাউল্লাহর সন্ত্রাসও বটে।’ দৃশ্যত নিজের দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হামিদ মিরের টুইটটি রিটুইট করেন মাজারি।
ইতিমধ্যে ইসলামাবাদে পৌঁছে গেছেন ইমরান খান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জিন্নাহ অ্যাভিনিউতে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে সরকারকে ছয় দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন।
পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের আজাদি মার্চ স্তব্ধ করে দিতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমাদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে আমি দেখলাম, জাতি নিজেদের দাসত্বের ভয় থেকে মুক্ত করতে পেরেছে।’
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ‘রেড জোনে’ অবস্থিত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীন সেনা মোতায়েনের এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
দেশটির ক্রিকেটার সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ মানুষের দুরবস্থার জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি জানতে চেয়েছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ কেন ভুক্তভোগী হবেন?
পাকিস্তানের হয়ে তিনটি ফরম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করা হাফিজ বুধবার টুইটে লিখেছেন, ‘লাহোরের কোনোও পেট্রল পাম্পে তেল পাওয়া যাচ্ছে না? এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না? রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ কেন ভোগান্তির শিকার হবেন?’
এরপরই তিনি ট্যাগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে। একই সঙ্গে তিনি ট্যাগ করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে। নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকেও ট্যাগ করেছেন হাফিজ।
জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে গত ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশজুড়ে একের পর এক সমাবেশ করেন ইমরান খান। এরপর ইসলামাবাদ অভিমুখে ২৫ মে ‘আজাদি মার্চ’-এর ডাক দেন তিনি। তিন মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আদায়েরও অঙ্গীকার করেছেন পিটিআই চেয়ারম্যান।
তবে কবে নাগাদ নির্বাচন দেওয়া হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। তারা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী আইনে সংস্কার আনার কথা বলছে। সম্প্রতি লন্ডনে পিএমএল-এন সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেখানে নির্বাচন পেছানোর ইঙ্গিত দেন নওয়াজ।