পাকিস্তানে ‘করোনায়’ শেষ সাদা বাঘ
পাকিস্তানের একটি চিড়িয়াখানায় গত মাসে মারা যায় সাদা বাঘের দুই শাবক। প্রাণী দুটির বয়স হয়েছিল মাত্র ১১ সপ্তাহ। এখন কর্মকর্তারা বলছেন, শাবক দুটি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। কারণ, ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, শাবক দুটির ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল ও সংক্রমণে ভুগছিল। যদিও প্রাণী দুটির করোনার নমুনা পিসিআর পরীক্ষা করা হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চিকিৎসা শুরুর চার দিন পর গত ৩০ জানুয়ারি লাহোর চিড়িয়াখানায় মারা যায় শাবক দুটি। তখন কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন, প্যানলিউকোপেনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে শাবক দুটি। ভাইরাসটিতে সাধারণত বিড়ালজাতীয় প্রাণী আক্রান্ত হয়, যা পাকিস্তানে সাধারণ ঘটনা বলে মনে করেন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। কিন্তু ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, বাঘের শাবক দুটির ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল ও সংক্রমণে ভুগছিল।
এদের মৃত্যুর পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা করে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। এই ছয়জনের মধ্যে একজন শাবক দুটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। দেখভাল ও খাওয়ানের সময় ওই ব্যক্তির থেকে শাবক দুটি আক্রান্ত হতে পারে।
সারা বিশ্বের করোনা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে ভারতের পরই পাকিস্তানের অবস্থান। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ১২ হাজারের বেশি।
লাহোর চিড়িয়াখানার উপপরিচালক কিরন সালেম রয়টার্সকে বলেছেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মনে করে, শাবক দুটি করোনাভাইরাস মহামারিরই শিকার। তিনি আরও বলেন, এদের মৃত্যুর পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা করে। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। এই ছয়জনের মধ্যে একজন শাবক দুটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। দেখভাল ও খাওয়ানের সময় ওই ব্যক্তির থেকে শাবক দুটি আক্রান্ত হতে পারে।
পাকিস্তানের চিড়িয়াখানাগুলোয় প্রাণীদের যথাযথভাবে দেখভাল না করায় প্রাণী অধিকার রক্ষা গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে প্রায়ই সমালোচনা করা হয়। চিড়িয়াখানার দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দেশটিতে শত শত প্রাণী মারা যায়।
২০২০ সালে পেশোয়ার চিড়িয়াখানায় চারটি জিরাফ মারা গেছে। একই বছর ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানায় আগুন লাগার পর খাঁচার ভেতরেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায় দুটি সিংহ।
জেএফকে অ্যানিমল রেসকিউ অ্যান্ড শেলটার নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জুফিশান আনুশাই রয়টার্সকে বলেছেন, লাহোর চিড়িয়াখানায় অবশিষ্ট দুই সাদা বাঘের শাবক মারা গেছে। এর মাধ্যমে চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি আবারও প্রকাশ পেল। তিনি বলেছেন, ‘সাদা বাঘ খুবই বিরল। এসব প্রাণীর সুস্থ জীবন নিয়ে বাঁচতে বিশেষ আবাসস্থল ও পরিবেশ প্রয়োজন। কোনো চিকিৎসাসেবা ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রাখলে এই রকম ঘটনা আমরা দেখতেই থাকব।’
জুফিশান আনুশাই আরও বলেন, কোভিড–১৯ নতুন ভাইরাস। বিশ্ব শুধু মানবজাতির জন্যই নীতিমালা করছে। দোকানে, চিড়িয়াখানা ও অন্যান্য স্থানে থাকা প্রাণীদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না।
তবে লাহোর চিড়িয়াখানার উপপরিচালক সালেম অবহেলার কথা অস্বীকার করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ও পরিবেশ পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমরা প্রাণী অধিকার রক্ষা কর্মীদের স্বাগত জানাই।’
পাকিস্তানের চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের দুর্গত অবস্থার খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় গত ডিসেম্বরে বাদামি রঙের দুটি হিমালিয়ান ভালুককে ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানা থেকে উড়োজাহাজে করে নিয়ে জর্ডানের অভয়াশ্রয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই চিড়িয়াখানায় সঙ্গীবিহীন অবস্থায় ভুগতে থাকা কাভান নামের বিরল প্রজাতির একটি হাতিকে কয়েক সপ্তাহে আগে কম্বোডিয়ার প্রাণী অভয়াশ্রমে অবমুক্ত করা হয়। হাতিটির করুণ অবস্থা দেখে প্রাণীটিকে মুক্ত করতে মার্কিন তারকা শেরসহ প্রাণী অধিকারকর্মীরা সারা বিশ্বে প্রচারণা চালান।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২০ সালে পেশোয়ার চিড়িয়াখানায় চারটি জিরাফ মারা গেছে। একই বছর ইসলামাবাদ চিড়িয়াখানায় আগুন লাগার পর খাঁচার ভেতরেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায় দুটি সিংহ।