পাকিস্তানি মডেল 'অনার কিলিং'-এর শিকার

কান্দিল বেলুচ
কান্দিল বেলুচ

পাকিস্তানের মডেল অভিনেত্রী কান্দিল বেলুচ ‘অনার কিলিং’-এর শিকার হয়েছেন। ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে তারকাখ্যাতি অর্জন করা এই নারীকে ‘পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে’ হত্যা করেছেন তাঁর ভাই। প্রতিবছর পাকিস্তানে পরিবারের অমতে প্রেম, বিয়ে করাসহ নানা ঘটনায় শত শত নারীকে পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোকজনের হাতেই এভাবে ‘অনার কিলিং’-এর শিকার হতে হয়। হতভাগ্য এই নারীদের সারিতে যোগ হলো ২০ বছর বয়সী কান্দিল বেলুচের নাম।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি পরিবারের সঙ্গে পাঞ্জাব প্রদেশে গ্রামের বাড়ি মোজাফফরবাদে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছিলেন। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্রথাবিরোধী আচরণের কারণে কান্দিল বেলুচ তরুণদের কাছে ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। যদিও রক্ষণশীলদের নিন্দা শুনতে হয়েছে তাঁকে।
মুলতানের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুলতান আজম এএফপিকে বলেন, কান্দিল বেলুচকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন তাঁর ভাই। প্রাথমিকভাবে এটাকে ‘অনার কিলিং’ বলে মনে করা হচ্ছে।
মুলতানের আরেক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, বেলুচের পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, গত রাতে ভাই তাঁর সঙ্গে ছিলেন এবং তিনিই তাঁকে গলা টিপে হত্যা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বেলুচের ভাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বেলুচের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। উদারপন্থীরা এ হত্যার বিচার দাবি করেন। তবে কিছু রক্ষণশীল নারী-পুরুষকে বেলুচের আত্মপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা যায়।

‘অনার কিলিং’-এর ওপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য চলতি বছর অস্কারজয়ী পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মাতা শারমিন ওবায়েদ-চিনয় এ হত্যায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে বলেছেন, বেলুচ হত্যাকাণ্ডকে পাকিস্তানে নারীর প্রতি সহিংসতার ‘মহামারী’র এক উপসর্গ বলা যায়। তাঁর এই হত্যাকাণ্ডে নারীরা নিজেকে আরও নিরাপত্তাহীন ভাবা শুরু করবেন।
সম্প্রতি বেলুচ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছিলেন। বারবারই বলতেন, ঈদের পর তাঁকে দেশ ছাড়তে হবে।
বেলুচ ২০১৪ সালে একটি ভিডিও পোস্ট করে রাতারাতি পাকিস্তানে পরিচিতি পান। ওই ভিডিওতে তিনি ক্যামেরার দিকে ঠোঁট ফুলিয়ে বলছেন, ‘আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?’ ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রথাবিরোধী ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি অনেকের প্রশংসা কুড়ান। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের তরুণ সমাজের কাছে।
গত মাসে পাকিস্তানের এক ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সেলফি তুলে তা পোস্ট করে বিতর্কের জন্ম দেন বেলুচ। দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয় এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করে। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন বেলুচ। ভালোবাসা দিবস পালনকে ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক করে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট। বেলুচ টকটকে লাল রঙের একটি পোশাক পরে সাজগোজ করে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাঁর ওই ভিডিওতে ৭০ হাজার মানুষ ‘লাইক’ দেন।
ওই সময় তিনি এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘লোকজন দারুণ পছন্দ করে আমাকে। বিশেষ করে মেয়েরা। আমি প্রতিদিন অনেক ফোন পাই। তাঁরা বলেন, আমি তাঁদের অনুপ্রেরণা। তাঁরা আমার মতো হতে চান।’