তেহরিক-ই-তালেবান ও পাকিস্তানের অস্ত্রবিরতি
পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান সরকার। দুই পক্ষ রাজি থাকলে অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে এটি।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি তালেবান যারা তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) নামে পরিচিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির আফগানিস্তানের তালেবান থেকে আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা পাকিস্তানে সক্রিয়। তারা মূলত পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে সেখানে ইসলামি শরিয়া আইন চালু করতে চাইছে।
আজ মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতি শুরু হয়ে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এর আগেও বহুবার দুই পক্ষ শান্তি আলোচনায় বসেছিল। তবে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর সব চুক্তিই ব্যর্থ হয়েছিল।
গত আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় আসে। এরপর টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের আবারও আলোচনা শুরু হয়। সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তানে, আফগান তালেবান নেতাদের সহযোগিতায় দুই পক্ষ বৈঠকে বসে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও নিষিদ্ধঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে।’ বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষের আলোচনা চলমান রয়েছে। তাই অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, টিটিপির সঙ্গে যে অস্ত্রবিরতি হয়েছে, তা পাকিস্তানের সংবিধান মেনেই হয়েছে।
নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। রয়টার্সের তথ্যমতে, টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০১৪ সালে গোষ্ঠীটি আফগান সীমান্তের কাছে পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ ১৪৯ জনকে হত্যা করে।
সর্বশেষ গত শনিবারও তারা দেশটির উত্তর ওয়াজিরিস্তানে একটি বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় চার সেনা নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। টিটিপি বলছে, দুই দিন আগে তাদের চার যোদ্ধাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে তারা।
এদিকে পুরোপুরি অস্ত্রবিরতির জন্য পাকিস্তান সরকারের হাতে বন্দী থাকা কয়েকজন সদস্যের মুক্তি দাবি করেছে টিটিপি। টিটিপির এক মুখপাত্র রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা আলোচনায় বসতে তৈরি আছেন। যে আলোচনা দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
পাকিস্তান সরকার ও আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত গনি সরকার একে অপরকে তালেবানকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য দায়ী করে এসেছে।