উইঘুর মুসলিম নিয়ে পাকিস্তান নীরব কেন
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুসলিমদের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকার জন্য পাকিস্তান এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তবে চীনের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠী ইস্যুতে পাকিস্তান রহস্যজনকভাবে নীরব।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের রক্ষাকারী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি উপস্থাপন করেছেন। তিনি নিয়মিত কাশ্মীরের বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গণহত্যার দায় চাপিয়েছেন মোদির বিরুদ্ধে।
এএফপির খবরে জানানো হয়, স্থানীয় সময় গত বুধবার ইমরান খান বলেন, ‘আমরা এবং কাশ্মীরিরা ভারতের অবৈধ আচরণ কখনো মেনে নেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাশ্মীরের জনসাধারণের ওপর ভারতের নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নেব না।’
এ সপ্তাহে ইমরান খান পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মোজাফফরাবাদে একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন। সেখানে কয়েক হাজার লোক অংশ নেয়।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুসলিমদের ব্যাপারে সোচ্চার হলেও প্রতিবেশী দেশ চীনে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর নির্যাতন ইস্যু নিয়ে ইমরান খান নীরব।
মানবাধিকার দলগুলোর তথ্যমতে, ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর সম্প্রদায় ও অন্যান্য তুর্কিভাষী সংখ্যালঘুদের একটি শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। চীন সেগুলো পুনঃশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করেছে।
কাশ্মীরি ও উইঘুর—দুই সম্প্রদায়কেই কারফিউ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে। চলাচলেও রয়েছে বিধিনিষেধ।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় কলামিস্ট হুমা ইউসুফ বলেছেন, উইঘুর সম্প্রদায় নিয়ে পাকিস্তানের নীরবতার কারণে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতিবাদের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, দুটি আলাদা ইস্যু। তবে পাকিস্তান নিজেদের মুসলিমদের রক্ষাকারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় ইমরান খানের এই বক্তব্য যথার্থ বলে মনে হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের উপপরিচালক মিখাইল কুগেলম্যান বলেন, এ ধরনের সমালোচনা যৌক্তিক। কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরি মুসলিম সম্প্রদায় ও ভারতের মুসলিমদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু উইঘুরদের নিয়ে তারা নীরব। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের নীতিমালা থাকা উচিত।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দুই দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করেছে। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দুই দেশ যুদ্ধেও জড়িয়েছে।
পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের অংশ হিসেবে চীন পাকিস্তানে পাঁচ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। ভারতের সঙ্গে অস্থিতিশীলতার সময়ে চীন পাকিস্তানকে কূটনৈতিক সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো হুসেন হাক্কানি এএফপিকে বলেন, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে চীনকে তাদের প্রধান সমর্থক মনে করে। বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে—এমন কিছু করতে বা বলতে নারাজ পাকিস্তান।
উইঘুর সম্প্রদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞসা করা হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেন। গত জানুয়ারি মাসে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা চীনের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চীনের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে ব্যক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।’
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো মাদিহা আফজাল বলেন, পাকিস্তানের জনসাধারণ উইঘুরদের নিয়ে খুব বেশি জানে না। এ কারণে তাদের সমস্যা সেভাবে অনুধাবনও করে না। অন্যদিকে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ রয়েছে। তাই এই ইস্যুটি অনেক পাকিস্তানির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান চায়, তাদের দেশের মানুষ এ ব্যাপারে সোচ্চার হোক।