উইঘুর প্রশ্নে কাশ্মীরকে টেনে আনায় ইমরান খানের বক্তব্য নিয়ে হইচই
চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে এনেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বন্ধু চীনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তুলোধুনো করেছেন ভারতকে। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ইমরান খানকে সমালোচনার তীরে বিঁধেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এইচবিও অ্যাক্সিওসের সাংবাদিক জোনাথন সোয়ানকে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দেন ইমরান খান। সোমবার অ্যাক্সিওসের ওয়েবসাইটে ইমরান খানের এই সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে। এতে উইঘুরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ দমন, আগামী দিনে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। আর তাতেই শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা।
আজ সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইঘুরদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইমরান খান পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ভারত কাশ্মীরে কী করছে? তিনি বলেন, কাশ্মীরকে উন্মুক্ত কারাগার বানানো হয়েছে। এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। এটা রীতিমতো ভণ্ডামি।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যুদ্ধও হয়েছে কয়েকবার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা বেশ জোরদার হয়েছে। কেননা ২০১৯ সাল থেকে কাশ্মীরে নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করেছে ভারত। নতুন করে মোতায়েন করা হয়েছে হাজারো সেনা। নির্বাচিত রাজনীতিকসহ ভিন্নমতের অনেককে বন্দী করা হয়েছে। ভারতের সংবিধান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা।
কাশ্মীরের এসব বিষয় নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ইমরান খান। জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে তিনি আগেও কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। অথচ চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি নীরব ভূমিকা রেখেছেন। এবার এইচবিও অ্যাক্সিওসের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে (পাকিস্তান–ভারত সীমান্ত) কী হচ্ছে, এটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।’
সাক্ষাৎকারে উইঘুরে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিয়ে নীরবতার বিষয়ে ইমরান খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত কী হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমি সব সময় মনোযোগ দিয়ে এসেছি। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তানেও অনেক কিছু ঘটছে। এখন কি আমি সব বিষয়ে কথা বলা শুরু করব?’
চীনকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ অভিহিত করে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা যখন অর্থনীতি রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম, তখন চীন প্রকৃত বন্ধুর মতো আমাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। পাকিস্তানিরা এটা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।’
উইঘুর নিয়ে ইমরান খানের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক মেহেদি হাসান। টুইটারে তিনি লিখেছেন, এটা (ইমরান খানের সাক্ষাৎকার) দেখা খুবই বেদনাদায়ক। সেখানে ইমরান বলার চেষ্টা করেছেন, জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে না। কারণ, চীন সরকারে থাকা তাঁর বন্ধুরা তাঁকে বলেছেন, তাঁরা এমন কোনো কাজ করছেন না।
এইচবিও অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আগামী দিনে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও অকপট ছিলেন ইমরান খান। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তানে অভিযান পরিচালনার জন্য পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সেনাঘাঁটি গড়তে দেওয়া হবে না।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আশপাশের কোনো দেশ কিংবা সেনাঘাঁটি থেকে আফগানিস্তানে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। তবে মার্কিন প্রশাসনের এমন ইচ্ছায় সায় নেই ইমরান খানের।
আল-কায়েদা, আইএস ও তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) পাকিস্তানের এলাকা ব্যবহারে ইমরান খান অনুমতি দেবেন কি না, তা জানতে চান সাংবাদিক জোনাথন সোয়ান। এ প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান সাফ জানিয়ে দেন, এ ধরনের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আফগান তালেবানের মুখপাত্র সোহেইল শাহিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি না দিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এমন চাওয়া অনুচিত। পাকিস্তান সরকার তা নাকচ করে দিয়ে সঠিক কাজই করেছে।