ইসলামাবাদে ইমরান, রেড জোন রক্ষায় সেনা অনুমোদন শাহবাজ সরকারের

রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চ করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ছবি : পিটিআইয়ের টুইটার থেকে

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান শ্রীনগর হাইওয়ে হয়ে ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছেন। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে তাঁর গাড়িবহর ইসলামাবাদে এসে পৌঁছেছে। তিনি এখান থেকে ডি–চকে তাঁর দলের কর্মী–সমর্থকদের কাছে যাবেন। ডনের এক খবরে বলা হয়, পুলিশি বাধা ও গুলির মুখেও সেখানে ইমরানের সমর্থকেরা অবস্থান করছেন।

ডনের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের ‘রেড জোনের’ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে শাহবাজ শরিফের সরকার। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমতিও দিয়েছে সরকার। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ একটি প্রজ্ঞাপন টুইট করে বলেছেন, সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে রেড জোনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকেরা রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ (আজাদি মার্চ) শুরু করেছেন। এই কর্মসূচি ঠেকাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি এখন ইসলামাবাদে ডি–চকের পথে রয়েছেন।

ইমরান খান এক ভিডিও বার্তায় সব পাকিস্তানি নাগরিকদের তাঁদের শহরের রাস্তায় নামতে বলেন। এ ছাড়া ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চে সবাইকে ডি-চকে পৌঁছাতে বলেন।

রাজধানী অভিমুখে আসার পথে ৫০ কিলোমিটার দূরে যাত্রাবিরতি করেন ইমরান। সেখানে তিনি বলেন, আমদানি করা সরকার কর্তৃক নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর সমর্থকরা ডি-চক খালি করবেন না।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, ইমরান খানের ডাকে এ লংমার্চের আগে রাজধানী অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বহু সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের অভিযানে বহু পিটিআই সমর্থক গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার ইমরান খান ও তাঁর সহযোগীদের আটকের পরিকল্পনা করছে সরকার।

তবে ইমরান খান দাবি করেছেন, তাঁর গাড়িবহর যখন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছে তখন পুলিশও বুঝতে পেরেছে তার জিহাদি লক্ষ্যের বিষয়টি। পরে পিটিআইয়ের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, ইমরান খানের গাড়িবহর ডি–চকের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ সদস্যরাও হাতে নেড়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

এর আগে পাঞ্জাবে পিটিআইয়ের আজাদি লং মার্চ শুরুর সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে এবং পিটিআই সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা শুরু করলে উদ্বেগ ছড়ায়। পিটিআই নেতা শিরিন মাজারি দাবি করেছেন, পুলিশ নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করে মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। তিনি বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ কেবল আদালতের আদেশ অমান্য করাই নয়, এটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম।’

এর আগে ইমরান খান এক ভিডিও বার্তায় সব পাকিস্তানি নাগরিকদের তাঁদের শহরের রাস্তায় নামতে বলেন। এ ছাড়া ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চে সবাইকে ডি-চকে পৌঁছাতে বলেন।

ইমরানের এই লং মার্চ ঠেকাতে ইসলামাবাদে প্রবেশের সবকটি সড়ক কনটেইনার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। শ্রীনগর হাইওয়ে, পিন্ডি রোড, জিটি রোড, কাশ্মীর-ঝিলাম রোডের মতো যেসব মহাসড়ক পাকিস্তানের প্রাদেশিক শহরগুলোর সঙ্গে রাজধানীকে সংযুক্ত করেছে, সেগুলোতেও কনটেইনার ও কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়েছিল পুলিশ। ইমরান খান সবাইকে ডি-চকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমি সেখানে পৌঁছাব। তিনি নারী ও শিশুদেরও সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নামতে বলেন।

আরও পড়ুন

ইমরান খান আরও বলেন, সুখবর হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিয়েছেন লং মার্চের সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। আপনাদের সম্মিলিত উপস্থিতি পাকিস্তানজুড়ে বার্তা দেবে যে, আমদানি করা সরকার জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে গাড়িবহর নিয়ে যাত্রা করেন ইমরান। পাঞ্জাব সরকার রাস্তায় যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল তা সরিয়ে সামনে এগিয়ে চলেন তিনি।

ইমরান খান ছাড়াও পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী, শিরিন মাজারি দলের কর্মী সমর্থকদের রাজধানী ডি-চকে জমায়েত হতে আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, রাস্তার সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এদিকে, ইসলামাবাদের ব্লু এরিয়াতে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে ওই এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। সরকার দাবি করছে, পিটিআই সমর্থকেরা আগুন লাগিয়েছে। তবে পিটিআই দাবি করেছে, পুলিশের ভারী গোলাবর্ষণ চলছে।

পিটিআইয়ের ‘আজাদি মার্চ’ ঠেকাতে পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের কথা মঙ্গলবারই জানিয়েছে সরকার। পুলিশ পিটিআই কর্মী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় এদিন। রাজধানী ইসলামাবাদ ও অন্যান্য বড় শহর লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন