রাশিয়া সফরে যাওয়ায় ক্ষমতাধর একটি দেশ ক্ষুব্ধ : ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া সফরে যাওয়ায় একটি ক্ষমতাধর দেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে। শুক্রবার ইসলামাবাদে নিরাপত্তা সংলাপে তিনি এই অভিযোগ করেন। তবে দেশটির নাম উল্লেখ করেননি তিনি। খবর ডনের।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে হামলা চালানোর এক মাস পরও পশ্চিমা দেশগুলো যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছে, তখন অজ্ঞাত সেই দেশের মিত্র ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে।

রাশিয়াকে নিয়ে পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘আমি আজকে (শুক্রবার) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি পড়লাম। সেখানে তাঁরা ভারতের বিষয়ে কিছু বলেননি। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কেন বলা হচ্ছে?’

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া সফরের দুই দিনের (২৩–২৪ ফেব্রুয়ারি) সফরে মস্কোয় যান ইমরান খান। ওই সময় রাশিয়া সফরে না যেতে যুক্তরাষ্ট্র ইমরানকে অনুরোধ করেছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালানো নির্দেশ দেন।

২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে চাপে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। ওই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আগামী রোববার অধিবেশন শুরু হবে। ওই দিনই প্রস্তাবটির ওপর ভোটাভুটি হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে ইমরান খানের দাবি, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এ বিষয়ে দেশটি ‘হুমকির চিঠি’ পাঠিয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দাবি নাকচ করা হয়েছে।

ইমরান খান সরকারের কয়েকটি শরিক দল জোট ত্যাগ করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে তাঁর দল। ফলে ইমরান খানের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের টানাপোড়েনের গুঞ্জনও রয়েছে। দেশটির নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ইমরান খানের সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিরোধীরা ইমরানকে হটাতে একজোট হয়েছে।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইমরান খান। এ ছাড়া শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা জানা যায়। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইমরান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এক দেশের ‘হুমকির চিঠি’ নিয়ে কথা বলেন। একপর্যায়ে ইমরান খান বলেন, ওই চিঠির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এর পরপরই নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, দেশটি যুক্তরাষ্ট্র নয়। ইমরান চিঠিটিকে তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ’ হিসেবে দাবি করেছেন।

এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ দল পিটিআইয়ের এক সমাবেশে ওই ‘হুমকির চিঠি’ দেখান ইমরান খান। তবে ওই চিঠি কোন দেশ পাঠিয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি। নাম প্রকাশ না করে কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে গত বুধবার জিও নিউজ জানায়, একটি বিদেশি রাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক দূত চিঠিটি লিখেছেন।

সূত্রগুলো জানায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দূত পাকিস্তানে চিঠিটি পাঠান। ইমরান খান চিঠির বিষয়টি সামরিক নেতৃত্বকে অবহিত করেন। বলা হয়, কূটনৈতিক ওই চিঠিতে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল।

জিও টিভির এক অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি হাইকমিশনার আবদুল বাসিত বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের দূতের নেওয়া নোটের প্রতি হয়তো ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই দূতের নিজস্ব মূল্যায়নও থাকতে পারে।

আরও পড়ুন

তবে এ ধরনের চিঠি পাঠানোর বিষয়টি জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাচ্ছে—তাঁর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক কেট বেডিংফিল্ড বলেন, এ ধরনের অভিযোগের একেবারেই সত্যতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও ইমরান খানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি আমাদের সম্মান ও সমর্থন রয়েছে।’ ইমরান খানের করা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

নানামুখী চাপের মুখে থাকা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে তাঁর সরকার। আজ দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের তথ্য পেয়েছে। বিষয়টি প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের সজাগ থাকতেও বলা হয়েছে। খবর ডনের।

ইমরান খানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রথম আনেন পিটিআই নেতা ফয়সাল ভাইদা। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে তিনি বলেন, দেশকে বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।