পাকিস্তান চা–সংকটে, কেজি ১৬০০ রুপি
পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি টাকার দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপি দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপে সাধারণ মানুষ। আটা, ডাল, চাল, দুধ—সবকিছুরই দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এর অবস্থায় দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের দামও আকাশছোঁয়া। রকেটের গতিতে বাড়ছে দাম। খোলাবাজারে দাম এখন ১ হাজার ৬০০ পাকিস্তানি রুপিতে পৌঁছেছে।
পাকিস্তানের বন্দরে গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত আসা প্রায় ২৫০টি চা–বাহী কনটেইনার এখনো আটকে আছে। এমন অবস্থায় চা–সংকটে পাকিস্তান। গত ১৫ দিনে দেশটিতে চায়ের (খোলা) দাম ১ হাজার ১০০ পাকিস্তানি রুপি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৬০০ রুপিতে পৌঁছেছে।
পাকিস্তান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফপিসিসিআই)-এর চাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির আহ্বায়ক জিসান মাকসুদ বলেন, বর্তমানে আমদানি–সংকট চলছে। এতে মার্চে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
জিসান মাকসুদ বলেন, ব্যাংকগুলো বলেছে তারা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (এসবিপি) থেকে ১৮০ দিনের আমদানি ঋণপত্র খোলার নির্দেশনা পেয়েছে। আর তাতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। জিসান মনে করেন, ১৮০ দিনের বিলম্বিত অর্থ পরিশোধ চুক্তির আওতায় ছয় মাস পর আমদানি মূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, আন্তব্যাংক বাজারে ছয় মাস পরে ডলারের হার কত হবে, তা কেউ জানে না।
পাকিস্তান টি অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ)-এর নির্বাহী সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন জিসান। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খুলছে না। তারা বলছে, নতুন ঋণপত্র খোলার জন্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
জিসানের আশঙ্কা, আটকে থাকা চালানগুলো খালাস না হলে আসন্ন রমজান মাসে চায়ের দাম কেজিপ্রতি আড়াই হাজার রুপিতে পৌঁছাতে পারে। আর সরবরাহের ঘাটতি ও উচ্চমূল্যের কারণে কল্যাণ সমিতিগুলো হয়তো রেশন ব্যাগে চা–পাতা দিতে পারবে না।
জিসান মনে করেন, পাকিস্তানের উচিত কেনিয়ার সঙ্গে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করা। এর মধ্য দিয়ে মোম্বাসায় অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক নিলাম থেকে কেনিয়ার ৯০ শতাংশ চা আমদানি করা যাবে। মোম্বাসার ওই নিলামে আফ্রিকা অঞ্চলের সব ধরনের চা বিক্রি হয়ে থাকে।
পাকিস্তান প্রতিবছর কেনিয়া থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের চা আমদানি করে থাকে। আর দেশটিতে শুধু ২৫ কোটি ডলার মূল্যের বিভিন্ন জিনিস রপ্তানি করে থাকে।
জিসান বলেন, পিটিএ যদি কেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে তাহলে পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ বছরে ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চাল, সার্জিক্যাল পণ্য, টেক্সটাইল, ট্রাক্টর, ইলেকট্রনিকস, আইটি, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। কারণ, কেনিয়া এখন অন্য দেশ থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করে থাকে।
পিটিএ স্বাক্ষর হলে চায়ের দামও কমে যাবে। জিসান মনে করেন, পারস্পরিক স্বার্থে অন্য মুদ্রার মাধ্যমে বাণিজ্য জোরদার করার ব্যাপারেও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে।