পাকিস্তানে ডলার–সংকটের ধাক্কায় ধুঁকছে ওষুধশিল্প

পাকিস্তানে গত কয়েক মাসে দেশটিতে ওষুধ উৎপাদন কমেছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। অন্তত চারটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি  ইতিমধ্যে পাততাড়ি গুটিয়েছে

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি ওষুধের দোকান
ছবি: ডয়চে ভেলে

ডলার–সংকটের কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি চরম সংকটময় সময় পার করছে। ডলারের বিপরীতে রুপির অব্যাহত দরপতনের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত কয়েক মাসে দেশটিতে ওষুধ উৎপাদন কমেছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। অন্তত চারটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি পাকিস্তান থেকে ইতিমধ্যে পাততাড়ি গুটিয়েছে। খবর ডয়চে ভেলের।

ডলার–সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করতে প্রয়োজনীয় ডলার দিতে পারছে না। পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যালস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেন, গত জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলো ওষুধের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার আবার অনুমতি দেয়। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কম থাকায় এলসি খোলার জন্য যেসব আবেদন জমা পড়েছে, তার মধ্যে মাত্র অর্ধেকের অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতিকে দুষছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য আইএমএফের ঋণসহায়তা প্যাকেজ ১১০ কোটি টাকা ডলার ছাড় হওয়ার আগপর্যন্ত এই সমস্যা থাকবে বলে মনে করেন তাঁরা।ঋণসহায়তার প্যাকেজের অর্থ পেতে গত মাসে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সুখবর মেলেনি।পাকিস্তানের অধিকাংশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত বছর ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির বড় ধরনের দরপতনের পর কাঁচামালের দাম প্রচুর বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে ওষুধ উৎপাদন খরচে। পাকিস্তানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের (ডিআরএপি) সুপারিশে কেন্দ্রীয় সরকার দেশটিতে ওষুধের খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয়। সম্প্রতি ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম সাড়ে ৩৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতির কারণে জনগণ বেশ ক্ষুব্ধ। এমন অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ালে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে—এমন আশঙ্কায় শাহবাজ শরিফের সরকার এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। কারণ, দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে সাড়ে ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে।এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১৯টি ব্যথানাশক ওষুধের দাম সামান্য বাড়ানোর অনুমতি দেয় ডিআরএপি। এর মধ্যে ব্যথানাশক ও জ্বর কমানোর ওষুধ আছে। তবে সেটা অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে তা মেনে নেয়নি ওষুধ কোম্পানিগুলো।

আরও পড়ুন

সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেন, ‘ইতিমধ্যে চারটি বহুজাতিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে পাকিস্তান ছেড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ব্যয় সামলাতে না পেরে আরও ৪০টি দেশি ওষুধ কোম্পানি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে বলে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।’পাকিস্তান ওষুধ আইনজীবী ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর মেহের জানিয়েছেন, আমদানি করা অন্তত ১০ শতাংশ জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহে ঘাটতি দেখা গেছে।এদিকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে অস্ত্রোপচার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন