ইমরান খানের ওপর হামলা: কী ঘটেছে, পাকিস্তানের সামনে কী
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খান (৭০) হামলাকারীদের গুলিতে আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে লংমার্চ চলাকালে তাঁর ওপর গুলি চালানো হয়। তাঁর পায়ে কয়েকটি গুলি লেগেছে। এদিন কী কী ঘটেছে ও পাকিস্তানের সামনেইবা কী অপেক্ষা করছে, এক প্রতিবেদনে সেসব বিষয় তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ইমরান খানের ওপর যে ধরনের হামলা
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশেষ ধরনের ট্রাকে করে পাঞ্জাব প্রদেশে একটি লংমার্চে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পিটিআই নেতা ইমরান খান। ভিড়ের মধ্যে এক হামলাকারী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। এ সময় তাঁর ডান পায়ে গুলি লাগে। আহত হন আরও ছয়জন। একজন নিহতও হন।
হামলার পরপরই আহত ইমরান খানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। পিটিআইয়ের অন্যতম নেতা ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
লংমার্চের গন্তব্য কোথায়?
পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরের আল্লাহওয়ালা চক এলাকার কাছে ইমরান খানের ওপর এ হামলা হয়। গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয়েছে তাঁর লংমার্চ। ৪ নভেম্বর, শুক্রবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এটি পৌঁছানোর কথা। সপ্তাহব্যাপী লংমার্চ যাত্রাপথে অতিক্রম করবে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার।
গুলিবিদ্ধ হলেও দৃশ্যত ইমরান গুরুতর আহত হননি। নিজ দলের প্রকাশ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর তিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ হাত নাড়ছিলেন। এ সময় মুখে কিছুটা হাসিও দেখা যায় তাঁর।
কেন লংমার্চের এ কর্মসূচি
এই লংমার্চকে পাকিস্তানের অন্যতম ‘বড় স্বাধীনতা আন্দোলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইমরান খান বলেছেন, অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে তিনি এ কর্মসূচি দিয়েছেন। ইমরানকে দেশটির নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করার কয়েকদিন পর এই কর্মসূচি দেন তিনি। বিদেশি নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারসামগ্রী বিক্রির প্রক্রিয়া গোপন করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কমিশন শাস্তিমূলক ওই পদক্ষেপ নেয়।
পুলিশ যা বলছে
জিও টিভির খবরে বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সন্দেহভাজন এক হামলাকারীকে ধরেছে। হামলার পর তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। একই সময়, পুলিশ ইমরান যে বিশেষ ট্রাকের ওপরে ছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সামনে এরপর কী
গুলিবিদ্ধ হলেও দৃশ্যত ইমরান গুরুতর আহত হননি। নিজ দল পিটিআইয়ের প্রকাশ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর তিনি এক পায়ে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ হাত নাড়ছেন। এ সময় তাঁর মুখে কিছুটা হাসিও দেখা যায়। পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ তাদের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছে, ইমরান খানের অবস্থা ‘স্থিতিশীল’।
হামলার কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানের ‘বল টিভি’ ইমরানের সহকর্মীদের একজন ইমরান ইসমাইলের বরাত দিয়ে জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিন থেকে চারটি গুলি লেগেছে।
এই লংমার্চকে পাকিস্তানের অন্যতম ‘বড় স্বাধীনতা আন্দোলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইমরান খান বলেছেন, অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে তিনি এ কর্মসূচি দিয়েছেন।
এ হামলা পাকিস্তানের বর্তমান বিস্ফোরন্মূখ পরিস্থিতিকে এক বিপজ্জ্বনক পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দলীয় প্রধানের ওপর ‘কাপুরুষোচিত হামলার’ প্রতিবাদে লাহোরে পিটিআইয়ের নেতা শেখ ইমতিয়াজ মেহমুদ নেতা–কর্মী ও সাধারণ জনগণকে অবিলম্বে লিবার্টি চকে (লাহোরে) আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, সামনে আরও সহিংসতা হবে; যা সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। পাকিস্তানে এ মুহূর্তে এটিই (সেনাবাহিনী) একমাত্র ‘কার্যকরী প্রতিষ্ঠান’। জেনারেলরা তাঁদের সামনে থাকা একাধিক বিকল্প—সামরিক আইন জারি থেকে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ এর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
ইমরান খান গত কয়েক মাস ধরে অব্যাহতভাবে ‘সেনাবাহিনীকে খেপিয়ে তুলছেন’, খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন এই বাহিনীকে। আর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর তাঁর দলীয় সহকর্মী শিরিন মাজারি টুইট করেছেন, ‘অবৈধ হস্তক্ষেপকারী ও ইস্ট্যাবলিশমেন্টকে (সেনাবাহিনী) জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
আর, এ বিরোধের পরিণতি হতে পারে যেকোনো কিছুই।