ইমরানকে কারাগারে রেখেই নির্বাচনের তোড়জোড়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখেই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী শুরু হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-নওয়াজ) নেতা শাহবাজ শরিফ পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা রাজা রিয়াজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে রাজা রিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে নামগুলো দিয়েছেন, সেগুলো আমি বিবেচনা করে দেখব। একইভাবে আমি যে নামগুলো দিয়েছি, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী খতিয়ে দেখবেন। এ নিয়ে আগামীকাল (আজ শুক্রবার) আবার বৈঠক হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কাদের নাম বিবেচনায় রয়েছে, তা জানতে চান সাংবাদিকেরা। তবে কারও নাম প্রকাশ না করে রাজা রিয়াজ বলেন, ছয়জন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কাকে বেছে নেওয়া হবে, তা শুক্রবারের বৈঠকের পর স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
রাজা রিয়াজ সদ্য ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতা। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান এখন কারাবন্দী। রাষ্ট্রীয় উপহার কেনা–বেচাসংক্রান্ত (তোশাখানা) দুর্নীতি মামলায় গত শনিবার তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত। পরে মঙ্গলবার ইমরানকে নির্বাচনে পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই আদেশ অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খান অংশ নিতে পারবেন না।
পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে (২০১৮ সালে) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল পিটিআই। তখন ইমরান খানের নেতৃত্বে দেশটিতে জোট সরকার যাত্রা শুরু করেছিল। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা আস্থা ভোটে হেরে ইমরানের সরকারের পতন ঘটে। ওই সময় ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র চাপ প্রয়োগ করেছিল বলে গতকালই ফাঁস হওয়া একটি কূটনৈতিক তারবার্তায় প্রকাশিত হয়েছে। ইমরানের পতনের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) কয়েকটি দলকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করেন পিএমএল নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। আর জাতীয় পরিষদ মেয়াদ পূর্ণ করলে ৬০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হবে।
সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিন আগে গত বুধবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে যত দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ না হয়, সে পর্যন্ত শাহবাজ শরিফই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নতুন কেউ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতে পারেন প্রেসিডেন্ট।
আজ শাহবাজ ও রাজা রিয়াজ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব পাবে পাকিস্তানের পার্লামেন্টারি কমিটি। সেখানেও কোনো সমাধান না এলে নির্বাচন কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বেছে নিতে দুই দিন সময় পাবে। কমিশনের কাছে প্রার্থীদের নামের যে তালিকা দেওয়া হবে, সেখান থেকেই কাউকে বেছে নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
এদিকে ডন–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রার্থীদের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি। বলা হচ্ছে, শাহবাজ শরিফকে পিপিপির দেওয়া তালিকায় তিনজনের মধ্যে রয়েছে আব্বাসের নাম।
আব্বাস ছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী হাফিজ শেখ ও ইশাক দার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি, সাবেক মুখ্য সচিব ফাওয়াদ হাসান ফাওয়াদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি তাসাদ্দুক জিলানি, আবদুল্লাহ হুসাইন হারুন, পির পাগারো ও মখদুম মেহমুদ আহমেদের নাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।