ক্রিকেটই ইমরানকে গ্রেপ্তার থেকে বাঁচিয়ে দিল
পাকিস্তানের পুলিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে দুই দিন তাঁর বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে ছিল। এমনকি আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সও সেখানে গিয়েছিল। নেতা গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন খবরে সেখানে ইমরানের সমর্থকেরাও জড়ো হন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ককে গ্রেপ্তার না করেই পুলিশ বাহিনীকে পিছু হটতে হয়েছে। কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্রিকেটই তাঁকে গ্রেপ্তার থেকে বাঁচিয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ইমরান খান। তাই আদালতের নির্দেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে ইমরান খানের বাসভবনে যায় পুলিশ। গত সোমবার থেকে তারা দুই দিন ঘেরাও করে রাখে তাঁর বাসভবন। তবে আদালতের নির্দেশে গতকাল বুধবার তারা পিছু হটে।
রাজনীতিতে নামার আগে ইমরান খানকে পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বের মানুষ চিনত ক্রিকেটার হিসেবে। ১৯৯২ আইসিসি বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপরই ক্রিকেটকে বিদায় জানান দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরাকে বলেন, ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খানের বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ, গতকালই ছিল পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) নকআউট ম্যাচ। ক্রিকেট ম্যাচকে নির্বিঘ্ন করতে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে লাহোর মাসকালান্দারসের বিপক্ষে মুলতান সুলতানসের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ইমরানের জামান পার্ক থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার বা ৫ দশমিক ৬ মাইল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ক্রিকেট দলকে স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে হবে। সে জন্যই কিছুক্ষণের জন্য সড়ক খালি করে দেওয়া হয়।
গতকাল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে লাহোর মাসকালান্দারসের বিপক্ষে মুলতান সুলতানসের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ইমরানের জামান পার্ক থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার বা ৫ দশমিক ৬ মাইল।
ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ক্রিকেট ভক্তরা ম্যাচ হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত যথাসময়ে ম্যাচ হবে জেনে তাঁরা উল্লাস প্রকাশ করেন।
এক টুইটার ব্যবহারী খুদে বার্তায় লেখেন, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, পিএসএলের ম্যাচ নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নকআউট পর্বের আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এসব ম্যাচকে নির্বিঘ্ন করতে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে জামান পার্কে আসা পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানে এখনো ক্রিকেটই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আর দেশের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মধ্যে পিএসএল হচ্ছে সবচেয়ে দর্শকনন্দিত। দেশের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের অনেকেই এই প্রতিযোগিতায় খেলে থাকেন। অবশ্য পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকার কারণে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রশাসনেও ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রশাসনে সাধারণত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ইচ্ছাতেই রদবদল হয়ে থাকে। এর ফলে ক্ষমতার পালাবদল হলে পিসিবিতেও পরিবর্তন হয়ে থাকে।
পিসিবির বর্তমান চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি ইমরান খানের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী। খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বর্তমান সরকার তাঁকে নিয়োগ দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইমরান লাহোরের মিনার–ই–পাকিস্তান স্মৃতিস্তম্ভে ১৯ মার্চ সমাবেশ ডেকেছেন। ওই দিনই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পিএসএলের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের আগে নাজাম শেঠি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন।
শেঠি এক টুইটবার্তায় লেখেন, লাখ লাখ ডলার মূল্যের ফাইনাল ম্যাচ ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রায় ২৫ হাজার এবং বিশ্বব্যাপী ১০ কোটির বেশি দর্শক সরাসরি এই খেলা উপভোগ করবেন।
টুইটারে শেঠি আরও লেখেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে সুন্দর প্রদর্শনী হচ্ছে এই ফাইনাল ম্যাচ। পাঞ্জাব সরকারকে অবশ্যই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্টেডিয়ামে ক্রিকেটপ্রেমীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক–ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হবে।
ইতিপূর্বে আদালতের এক আদেশে আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের অভিযান স্থগিত করা হয়।