পাকিস্তানে একদিকে সরকার গঠনের চেষ্টা, অন্যদিকে ভোটে কারচুপির প্রতিবাদ
পাকিস্তানে পিএমএল-এন ও পিপিপিসহ সমমনা দলগুলোর সরকার গঠনের তোড়জোড়ের মধ্যে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ জোরালো হচ্ছে। শুক্রবারও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে পাকিস্তানের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ আখ্যা দিয়ে শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের দিন ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবা বন্ধ রাখা হয়। এরপর ফল প্রকাশ করা হয় তিন দিন ধরে। ভোটের দিন কারচুপি ছাড়াও ফল পাল্টে দেওয়ার মতো জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই দেশে-বিদেশে সমালোচনা চলছে। নির্বাচনে অনিয়ম তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
ভোটে অনিয়ম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার পিটিআই। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৯২ আসনে জয় পেয়েছেন দলটির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পিটিআইয়ের দাবি, ফল পাল্টে তাদের সমর্থিত অনেক প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, তাঁদের কাছ থেকে ৮৫টি আসন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে শনিবার পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই। দলটির নেতা হাম্মাদ আজহার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভোটের পরদিন থেকেই পাকিস্তানে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে ধারাবাহিকতায় শুক্রবারও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল। এদিন সিন্ধু প্রদেশের জামশোরো শহরে বিপুল জনসমাবেশ করেছে রাজনৈতিক জোট গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (জিডিএ)। সমাবেশে জোটের নেতা পীর পাগারা বলেন, যে সরকার পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসছে, তারা ৮-১০ মাসের বেশি টিকবে না। তাঁর আশঙ্কা, জিডিএর বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশে জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করা হতে পারে।
এদিকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের ওয়াজিরিস্তানে পিটিআইয়ের সপ্তাহব্যাপী সড়ক অবরোধ চলছে। এ ছাড়া বেলুচিস্তানের কোয়েটায় নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন পশতুনখা মিলি আওয়ামী পার্টি, ন্যাশনাল পার্টি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি ও হাজারা ডেমোক্রেটিক পার্টি নিয়ে গঠিত চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা।
বিরোধী আসনে বসবে পিটিআই
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এককভাবে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের তৎপরতা চলছে। জোট গঠনে সমঝোতায় পৌঁছেছে ৭৯ আসন পাওয়া নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), ৫৪ আসন পাওয়া বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও ১৭ আসন পাওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানসহ (এমকিউএম-পি) কয়েকটি দল।
ইমরান-সমর্থিত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও তাঁরা পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট করবেন না বলে বারবার জানিয়েছে পিটিআই। শুক্রবার দলটির নেতা মুহাম্মদ আলী সাইফ জানিয়েছেন, ইমরান খানের নির্দেশে কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে বিরোধী দলের আসনে বসবেন তাঁরা।
জোট শরিকদের দর-কষাকষি
পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ নতুন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এই সরকারের মন্ত্রিসভায় না থাকার ঘোষণা দেওয়া বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপি জাতীয় পরিষদের স্পিকারের পদ চাইছে। এ পদের জন্য দুজন প্রার্থীকে মনোনীত করেছে তারা। তাঁদের একজন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ-এর সূত্র অনুযায়ী, পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের চেয়ারম্যান হতে পারেন পিএমএল-এন নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ইশাক দার। তবে তিনি এবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে পিএমএল-এন নেতা আজাম নাজির সিনেট চেয়ারম্যান হতে পারেন।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পিএমএল-এন। কেন্দ্রে তাদের সঙ্গে জোটে আসা পিপিপি পাঞ্জাবে গভর্নরের পদ চাইছে। এ পদের জন্য কামার জামান কাইরাকে মনোনীত করেছে তারা। অপরদিকে সিন্ধু প্রদেশের গভর্নরের পদ চেয়েছে কেন্দ্রে জোটের আরেক শরিক এমকিউএম-পি। এখানে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পিপিপি। এমকিউএম বলেছে, পিপিপি যদি তাদের এ দাবি মেনে না নেয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট পদে আসিফ আলী জারদারিকে ভোট দেবে না তারা।