পাকিস্তানে ভোটের প্রচারে নেই ইমরানের দল 

ইমরানের দলকে মাঠে থাকতে না দেওয়া হলেও পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের দলের নির্বাচনী প্রচার চলছে জোরেশোরে। গতকাল দেশটির রাওয়ালপিন্ডিতে
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর নির্বাচনী আসন পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালিতে ব্যাপক জনপ্রিয় মুখ। শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচার। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ইমরান খান বা তাঁর দলের কোনো পোস্টার সহজে চোখে পড়ে না।

মিয়ানওয়ালিতে তো নয়ই। নির্বাচনের আগেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নির্বাচনী প্রচারে যে ধরনের বাধা দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের প্রচার কর্মসূচি ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনী।

ইমরানের আসন মিয়ানওয়ালিতে পিটিআই থেকে তাঁর বদলে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন ৬১ বছর বয়সী জামাল আহসান খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের কর্মীরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। আমি নিজেও হত্যার হুমকি পেয়েছি। আমার জীবনে কখনো এ ধরনের তীব্র হুমকির নির্বাচনের মুখোমুখি হইনি।’

ইমরান খান
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইমরান খানের বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে। দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। অবশ্য ইমানের অভিযোগ, এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পাকিস্তানজুড়ে ইমরানের দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া গণমাধ্যমেও তাদের খবর প্রকাশে সেন্সর করা হচ্ছে। এতে পিটিআইকে কেবল অনলাইনে নির্বাচনী প্রচার চালাতে হচ্ছে।

দেশটির নির্বাচন কমিশন পিটিআইয়ের অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। দলটির অন্য প্রার্থীদের মতোই আহসান খানকে প্রায় লুকিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। তিনি সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, প্রচারপত্রও ঠিকমতো বিলি করতে পারছেন না।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে আহসান খান বলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে আমি অর্থপূর্ণভাবে প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করতে পারছি না।’

নির্বাচনের আর কিছুদিন মাত্র বাকি। অথচ ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে এখনো নির্বাচনী উত্তাপ ও উদ্দীপনা চোখে পড়ছে না।

মিয়ানওয়ালি থেকে রাজনৈতিক জীবনের অধ্যায় শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। এখান থেকেই তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয় পিটিআই। তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। এখানকার স্থানীয় সংবাদপত্র নাওয়া-ই-শারারের প্রধান সম্পাদক রানা আমজাদ ইকবাল বলেন, ইমরান মিয়ানওয়ালিতে একটি হাসপাতাল ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি একজন নায়ক। তবে তাঁর স্থায়ী রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার প্রাথমিক এবং সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কারণটি হলো সেনাবাহিনীবিরোধী অবস্থান।

ধারণা করা হয়, ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পেছনে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ক্ষমতাধর জেনারেলদের নিয়ন্ত্রণ কমাতে চেয়েছিলেন। ফলে তিনি তাঁদের সমর্থন হারান এবং ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। গত বছরের মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর শত শত কর্মী-সমর্থক রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পর থেকেই পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়। এ সময় হাজারো সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ১০০ জনের এখনো কোনো বিচার হয়নি।

নির্বাচনী প্রচার থেকে ইমরানের দল বিচ্ছিন্ন থাকলেও ভোটারদের মন থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি পিটিআই। তাঁরা এখনো ইমরান খানকে পছন্দ করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র ২৩ বছর বয়সী হানজালা বিন শাকিল প্রথমবারের মতো নির্বাচনে ভোট দেবেন। নিজের পছন্দের কথা লুকাতে চান না তিনি। হানজালা বলেন, ‘আমি ইমরান খানকে ভোট দেব। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি দেশকে পরোয়া করেন। অন্যরা নিজের ব্যক্তিস্বার্থকে বেশি অগ্রাধিকার দেন।’

ওয়েবসাইট বন্ধের অভিযোগ

ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) গত শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দলটি এর ব্যাখ্যা চেয়েছে। পিটিআইয়ের এক্স অ্যাকাউন্টে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে (পিটিএ) ট্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন তথ্যমন্ত্রী মুর্তজা সোলাঙ্গি বলেছেন, ‘পিটিআইয়ের ওয়েবসাইট পাকিস্তানে কেন বন্ধ, আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?’

নওয়াজের দলের ইশতেহার ঘোষণা

পিএমএল-এনের প্রধান নওয়াজ শরিফ গতকাল তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তাঁদের স্লোগান হচ্ছে, ‘পাকিস্তান কো নওয়াজ দো’। ইশতেহার ঘোষণার পর নওয়াজ বলেন, তাঁর দল ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।