পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসতে সব ছেড়েছেন ইমরান

২০১৮ সালে ইমরান খান খেলার দুনিয়ার নায়ক থেকে রাজনৈতিক জগতের নায়ক বনে যান।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁর সমর্থকেরা। গতকাল দেশটির করাচি শহরে
ছবি: এএফপি

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা।

পাকিস্তানের কয়েক দশক ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ইমরান খান। তবে গত বছর অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। কিন্তু ইমরান খান চুপ করে যাননি।

এর পর থেকে ক্রমে রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার করেছেন ৭০ বছর বয়সী পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ দলের নেতা। গত বছরের নভেম্বরে তিনি গাড়িবহর নিয়ে ইসলামাবাদে লংমার্চ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন। দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এত দিন তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার মামলাও রয়েছে। এর আগে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হলে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা বিশাল বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

একসময়ের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে সমালোচিত ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তাঁর বাজে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে।

করোনার সময়ে দুর্নীতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান ঘাটতিতে হতাশার মধ্যে গত বছরের এপ্রিলে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। ইমরান খান অবশ্য এসব সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানের পার্লামেন্ট বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। তাঁর ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে গেলে তিনি অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হন। ভোটে হেরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এতে দেশটিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার তালিকায় আরও একটি নাম যুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।

১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ইমরান খান। ২০১৮ সালে পাকিস্তানকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তাঁর জাতীয়তাবাদী খ্যাতি ও ক্যারিশমা যথেষ্ট ছিল না।

একসময়ের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে সমালোচিত ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তাঁর বাজে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে।

স্থানীয় জরিপ অনুযায়ী, ইমরান খান দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন। ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের পর দুই দশক কার্যক্রমের পর ২০১৮ সালে তাঁর দল ক্ষমতায় আসে।

আরও পড়ুন
পাকিস্তানের করাচিতে জ্বলন্ত পুলিশ ভ্যান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিজয়চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক নারী। আজ মঙ্গলবার তোলা
ছবি: রয়টার্স

ক্রিকেট-উন্মাদনার দেশ পাকিস্তানে নায়ক হিসেবে খ্যাতি ও মর্যাদা পেলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্রাত্য ছিল পিটিআই। এর আগে ১৭ বছরে ইমরান খান ছাড়া তাঁর দলের আর কেউ নির্বাচনে আসন পাননি। ২০১১ সালে ইমরান খান তাঁর রাজনৈতিক জনসভাগুলোয় সমর্থক পেতে শুরু করেন। তিনি জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ–সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেন। ক্রমে বিভিন্ন মহলে জনপ্রিয় হতে শুরু করেন ইমরান।

২০১৮ সালে ইমরান খান খেলার দুনিয়ার নায়ক থেকে রাজনৈতিক জগতের নায়ক বনে যান। তবে পর্যবেক্ষকেরা সতর্ক করে বলেন, ইমরান খানের শত্রু তাঁর নিজের মুখের কথাগুলোই। কারণ, তাঁর কথায় আকাশসমান আশা দেখেছেন জনগণ। তাঁকে সে প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।

আরও পড়ুন

ক্ষমতায় থাকাকালে ইমরান খান পাকিস্তানকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান। তবে তাঁর দুর্নীতি দমন প্রচেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। কারণ, এতে দুর্নীতিমুক্ত করার নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষে নেওয়ার অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ তোলা হয়।

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন ও অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তারা এখনো যথেষ্ট ক্ষমতাধর। তাঁরা দেশটির এক ডজনের বেশি বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন।

আরও পড়ুন