পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দিলেন ইমরান
জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আবার সরব হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর চাপের মুখে জনবহুল পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে শিগগিরই আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এত দিন পাঞ্জাবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত জোট সরকার ছিল। প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চৌধুরী পারভেজ এলাহি। তিনি গত সপ্তাহে গভর্নর বালিঘ-উর-রেহমানকে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ জন্য চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ইমরান খান। গতকাল শনিবার রাতে গভর্নর পাঞ্জাবে নতুন একজন তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের অনুমোদনপত্রে সই করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পাঞ্জাবে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। এবার তাঁর পালা। জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি না, তা প্রমাণ করতে হবে।
পিটিআই ও দলটির চেয়ারম্যান ইমরান খান কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাঞ্জাবে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রদেশটিতে নতুন করে নির্বাচন চায় পিটিআই। সংবিধান মেনে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ ছাড়া খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পিটিআই-সমর্থিত জোট সরকার রয়েছে। সেখানেও প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। নিজেদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এ দুই প্রদেশে সরকার গড়তে চায় পিটিআই।
ইমরান খানের এসব পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য, দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা, আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া। এ জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ওপর পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চান তিনি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয় না থাকলে দেশটিতে প্রাদেশিক ও সাধারণ নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হওয়ার রেওয়াজ। সেই হিসাবে, আগামী অক্টোবরে পাকিস্তানে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ইমরান খানের পতনের পর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তানে জোট সরকার গঠিত হয়। সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই সরকার টিকে আছে। তবে বসে নেই ইমরান খান। পদত্যাগের পর থেকে দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তিনি। আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ ও লংমার্চ করেছেন।
তবে ইমরান খান চান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পক্ষ থেকে দ্রুত পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। এ জন্য চাপ প্রয়োগের কৌশল বেছে নিয়েছেন তিনি। এর আগে পিটিআইয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছিলেন, নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ জোরদার করবে তাঁর দল।
এর অংশ হিসেবে জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি করতে চান ইমরান খান। গতকাল পাকিস্তানের হাম নিউজ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পাঞ্জাবে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। এবার তাঁর পালা। জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি না, তা প্রমাণ করতে হবে।’
সাক্ষাৎকারে পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খান আরও বলেন, শিগগিরই শাহবাজ শরিফকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলবেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। প্রথমে শাহবাজকে আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হবে। পরে তাঁর ব্যাপারে অন্যান্য পরিকল্পনা রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল পিটিআইয়ের মনোনয়নে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হন ইমরান খান। হেরে গিয়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নেন ইমরান খান।
এ জন্য রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ (নওয়াজ), সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্র’কে দায়ী করেন ইমরান খান। তবে ক্ষমতা ছাড়ার আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটের জেরে চাপে ছিল ইমরান খানের সরকার। পরে তা রাজনৈতিক সংকটে রূপ নেয়। যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট ইমরান খানের বিদায় দূর হয়নি।
ইমরান খানের পতনের পর শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তানে জোট সরকার গঠিত হয়। সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই সরকার টিকে আছে। তবে বসে নেই ইমরান খান। পদত্যাগের পর থেকে দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তিনি। আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ ও লংমার্চ করেছেন।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন ইমরান খান। এতে লাখো মানুষ সমবেত হন। তবে ৩ নভেম্বর পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চে হামলায় ইমরান খান পায়ে গুলিবিদ্ধ হলে লংমার্চ সাময়িক বন্ধ করা হয়। ১০ নভেম্বর আবার লংমার্চ শুরু হয়। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে আবার লংমার্চে যোগ দেন তিনি। মূলত এ লংমার্চে বিপুল জনসমাগম ইমরান খান ও পিটিআইকে ক্ষমতায় ফিরতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।