ইমরান খানের সমর্থকেরা কীভাবে জবাব দেবে

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দেশটির দুর্নীতিবিরোধী একটি বিশেষ আদালত এ রায় দেন।

এই রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার পৃথক মামলায় ইমরানকে ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আর গত আগস্টে আরেক মামলায় তিন বছর সাজা হয় পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরানের।

কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে ইমরানের বিরুদ্ধে এমন রায় আসবে, এটা তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে প্রত্যাশিতই। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এমন রায় হয়, তাঁরা পরে মুক্তিও পান। তবে ইমরানের কর্মী–সমর্থকেরা এই রায়ে মনোবল হারিয়ে ফেলেন নাকি ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এর পাল্টা জবাব দেন, সেটাই প্রশ্ন।

গতকাল পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর (এনএবি) করা মামলায় ইমরান ও বুশরাকে সাজা দেওয়া হয়। গত মাসে করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালে পাওয়া উপহার কম দামে কিনে নিয়েছেন ইমরান ও বুশরা। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপহার দেওয়া গয়না সেট কম দামে কিনে নেওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাঁদের।

পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা নিজেই নিজেকে কবর দিয়েছে
আলিমা খান, ইমরান খানের বোন, রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে

গতকাল দেওয়া রায় অনুযায়ী, ইমরান ও বুশরা ১০ বছর সরকারি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। পাশাপাশি ইমরান ও বুশরাকে ৭৮ কোটি ৭০ লাখ পাকিস্তানি রুপি করে জরিমানা করেছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় বুশরা আদালতে হাজির ছিলেন না। তবে কিছুক্ষণ পর আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

ইমরান খান (ডানে) ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি (বাঁয়ে)
ফাইল ছবি: এএফপি

‘বিচারব্যবস্থা নিজেকে কবর দিয়েছে’

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় ইমরানের বোন আলিমা খান বলেছেন, ‘বিচারব্যবস্থা নিজেই নিজেকে কবর দিয়েছে।’

পিটিআই বলেছে, মাত্র দুই দিনেই পাকিস্তানে বিদ্যমান সব আইনকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলটি বলছে, এসব রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিচারিক আদালতে এ রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে গতকাল দলটি বলেছে, ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী আরও একটি প্রহসনের বিচারের শিকার হলেন। প্রহসনের এই বিচারে তাঁদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার মতো সুযোগও দেওয়া হয়নি।

জাহিদ হুসাইন সংবাদমাধ্যম ডন-এ মতামত কলামে লিখেছেন, আবারও বিতর্কিত ও সন্দেহজনক বিচারের মাধ্যমে পাকিস্তানের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে, যা লজ্জাজনক।

বিচারিক আদালতের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পিটিআই নেতা সৈয়দ জুলফিকার বুখারি বলেছেন, ইমরানের কারাদণ্ডের এ রায় দেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে আরও একটি কালো দিন হয়ে থাকবে। উচ্চ আদালতে এই সাজা বাতিল হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সমান সুযোগ পাচ্ছেন না পিটিআইয়ের প্রার্থীরা

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। দলটির অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে তারা সমান সুযোগ পাচ্ছে না। তুচ্ছ কারণে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের হয়ে নির্বাচনে কাজ করছে। পিটিআইকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনেরা। এদিকে দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের মামলায় নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট ছাড়াই এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন পিটিআইয়ের নেতারা। এমনকি দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারছেন না তাঁরা, নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

রেহান জেব খান
ছবি: পিটিআইয়ের এক্স হ্যান্ডল থেকে

বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হচ্ছেন পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। গতকাল খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পিটিআইয়ের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী রেহান জেব খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আগের দিন মঙ্গলবার বেলুচিস্তানের কোয়েটায় পিটিআইয়ের সমাবেশের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে চারজন নিহত হন।

কী বলেন বিশ্লেষকেরা

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাজহার আব্বাস জিও নিউজকে বলেন, যে সময়ে রায় ঘোষণা করা হলো, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হবে। এখন পিটিআইয়ের নেতা–কর্মী-সমর্থকেরা মনোবল হারিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েন, নাকি নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেন, সেটাই প্রশ্ন।

পাকিস্তানে এ ধরনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের এ রকম সাজা দেওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোশাররফ জাইদি। তিনি ডনকে বলেন, আগেও এমন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের বিচার ও সাজা দিতে দেখা গেছে। আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর এসব মামলা থেকে তাঁদের খালাসও দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ভবন
রয়টার্সের ফাইল ছবি

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মির বলেন, যাঁরা খোঁজ রাখেন, তাঁদের কাছে ইমরান ও বুশরা দম্পতির বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের এ রায় অপ্রত্যাশিত মনে হওয়ার কথা নয়। নির্বাচনের আগে আগে বিভিন্ন মামলায় ইমরান খানকে যে সাজা দেওয়া হবে, এটা তো প্রত্যাশিতই ছিল।

লেখক ও সাংবাদিক জাহিদ হুসাইন সংবাদমাধ্যম ডন-এ মতামত কলামে লিখেছেন, আবারও বিতর্কিত ও সন্দেহজনক বিচারের মাধ্যমে পাকিস্তানের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে, যা লজ্জাজনক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তাঁর পূর্বসূরিদের ভাগ্য বরণ করে নিতে হলো।