ইমরানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ, লাহোরে সেনানিবাসে হামলা

পাকিস্তানের করাচিতে জ্বলন্ত পুলিশ ভ্যান থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিজয়চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক নারী। আজ মঙ্গলবার তোলা
ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী-সমর্থকেরা। বিভিন্ন স্থানে তাঁর পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেও বিক্ষোভ ঠেকানো যাচ্ছে না। উল্টো লাহোরে সেনানিবাসে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ পিটিআই কর্মী-সমর্থকেরা।

ইমরান খানকে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করায় কর্তৃপক্ষের প্রতি সমন জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ গ্রেপ্তারের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের পরপরই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছে। একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও হাজির না হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে এনএবি।

রানা সানাউল্লাহ বলেন, যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছিল। ওই ব্যক্তি আবাসন ব্যবসায়ী। তাঁর কাছ থেকে ইমরান ও তাঁর স্ত্রী ২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের জমি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানি লন্ডারিংয়ের ২৪ কোটি ডলার পাকিস্তানকে ফেরত দিয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থ ইমরান খান সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ফেরত দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

ইমরান খান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এনএবি তাঁর বিরুদ্ধে ১ মে পরোয়ানা জারি করে। শুধু এই একটি মামলা নয়। ক্ষমতা ছাড়ার পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে ১০০টির বেশি মামলা হয়েছে।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পরপরই দেশ অচল করে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন তাঁর দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। সমর্থকদের রাজপথে নেমে আসতে বলা হয়েছে। পিটিআইয়ের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের জনগণ—এখন আপনাদের সময়। ইমরান খান সব সময় আপনাদের পাশে ছিলেন। এখন সময় তাঁর পাশে দাঁড়ানোর।’

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জ্যেষ্ঠ নেতারা ইতিমধ্যে জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা ওই বৈঠক থেকে ঠিক করা হবে।

আরও পড়ুন

দলের নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারির পরও সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ দমনে ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইমরানের নিজের শহর লাহোরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে সেনানিবাসে সেনা কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়েছেন তাঁর সমর্থকেরা। সেনানিবাসে বিভিন্ন ভবনে তাঁদের ভাঙচুর চালাতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভ হয়েছে বেলুচিস্তানের কোয়েটায়। সেখানেও সেনানিবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন পিটিআইয়ের সমর্থকেরা। বন্দরনগরী করাচিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে যানবাহনে।

পেশোয়ারের ১৪৪ ধারা জারি করার পরও সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। কোয়েটা, মুলতান ও পেশোয়ারের বিভিন্ন স্থানের ভিডিওতে দেখা যায়, হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসেছেন। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ইমরান-সমর্থকেরা।