পাকিস্তানের পেশোয়ারে মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ৫৯

পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৯ জন।
ছবি : রয়টার্স

পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। হামলায় কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। গতকাল সোমবার জোহরের নামাজের সময় এ বিস্ফোরণ ঘটান একজন আত্মঘাতী হামলাকারী। তখন মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন কয়েক শ মুসল্লি।

পেশোয়ার শহরের পুলিশ লাইনস এলাকায় মসজিদটির অবস্থান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশের সদস্য। হামলার সময় মসজিদটি মুসল্লিতে পূর্ণ ছিল। বিস্ফোরণে মসজিদ ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। অনেকের মৃত্যু হয় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি অনেকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে এ হামলা হয়। মসজিদে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেনাবাহিনী, জরুরি সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়।

হামলার সময় মসজিদে ছিলেন শহীদ আলী (৪৭)। ইমাম নামাজ শুরু করার কয়েক সেকেন্ড পরই বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, ‘নামাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। বিকট শব্দের সঙ্গে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। এটা দেখে আমি দৌড়াতে শুরু করি। এ সময় মানুষ চিৎকার ও ছোটাছুটি শুরু করেন। সাহায্য চেয়ে অসংখ্য মানুষের সেই চিৎকার এখনো আমার কানে বাজছে।’

পেশোয়ার শহরটি আফগানিস্তান সীমান্তসংলগ্ন। এটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী। শহরের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয় পুলিশ লাইনসকে। পুলিশের এ আঞ্চলিক সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম ব্যুরো এবং এর পাশে প্রাদেশিক সরকারের সচিবালয়ের অবস্থান।
পাকিস্তানের একজন নেতৃস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে সম্ভবত হামলা হয়েছে। পেশোয়ার নগরের পুলিশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইজাজ খান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিস্ফোরণের সময় ওই এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা ছিল।

মসজিদে হামলার ঘটনার পরপরই পেশোয়ারসহ সারা দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া রাজধানী ইসলামাবাদে নিরাপত্তাসংক্রান্ত উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজ শুরুর কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাঁর শরীরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তবে হামলায় কারা জড়িত, তা জানা যায়নি। এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা বলছে, হামলাকারী আফগানিস্তানের নাগরিক। তিনি অন্য দেশে ছিলেন। হামলার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে দেশে ফিরেছিলেন।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে রক্ষা করার দায়িত্ব যারা পালন করছে, তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে চাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। যারা এ ঘটনার পেছনে রয়েছে, ইসলামের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুরো জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। যারা পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়ছে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।’

বিগত কয়েক মাসে পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। দেশজুড়ে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো। এসব হামলার বেশির ভাগ করছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে টিটিপির ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ‘যুদ্ধবিরতির’ সমাপ্তি টানে টিটিপি। তারপরই তারা পাকিস্তানে হামলা জোরদার করে।

টিটিপিকে পাকিস্তানে হামলা করার সুযোগ কে দিচ্ছে অভিযোগ তুলে চলতি মাসের শুরুতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছিলেন, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে টিটিপির আস্তানা আছে। এই আস্তানা নিশানা করে হামলা চালাবে পাকিস্তান। তাঁর এ অভিযোগকে অবশ্য ‘ভিত্তিহীন’ বলেছে তালেবান।