বাড়ি ফেরা নিয়েও নাটক করেছে পুলিশ : অভিযোগ ইমরানের
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান লাহোরে নিজ বাসভবনে ফিরেছেন। তাঁর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে নানা নাটকীয়তার পর আজ শনিবার ভোরে সড়কপথে জামান পার্কের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি।
ইসলামাবাদ থেকে লাহোরের উদ্দেশে রওনা করার পর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ি ফেরা নিয়েও পুলিশ নাটক করেছে। ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক তাঁকে লাহোরে ফিরতে বাধা দেওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বাইরে যাওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে উল্লেখ করে ইমরান খানকে তিন ঘণ্টা আদালত ভবনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
ইমরান বলেন, ‘তাঁকে (পুলিশের মহাপরিদর্শক) বোঝালাম, আমাদের জোর করে আটকে রাখা এবং অপহরণ করার মতো যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন, সে সম্পর্কে পাকিস্তানের মানুষকে জানানো হবে। এ কথা বলার পর আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেলাম।’
পিটিআই নেতা বলেন, এভাবে মহাপরিদর্শককে চাপ দিয়ে তিনি লাহোরের উদ্দেশে রওনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘অবশেষে রওনা করার পর আমরা দেখলাম, সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন নেই। যে ধরনের বিপদের ভয় দেখানো হয়েছিল, সে রকম কোনো বিপদের অস্তিত্বই ছিল না।’
ইমরান খানকে ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশটির জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরো (ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো-এনএবি) আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সহায়তায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ১০ মে বিশেষ আদালত (অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্ট) এ মামলায় ইমরান খানের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে তাঁর দল পিটিআই। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানের গ্রেপ্তার ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে গতকাল শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইমরান গতকাল ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলার জামিনের শুনানিতে অংশ নিতে। প্রথমে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় দুই সপ্তাহের জামিন পান তিনি। পরে ৯ মে পর্যন্ত করা কোনো মামলায় ইমরান খানকে ১৭ মে পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে আদেশ দেন আদালত।
এরপর ইমরান লাহোরে করা চারটি মামলায় জামিন চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলায় তাঁকে ২২ মে পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়। হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ১৫ মে সকাল পর্যন্ত ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
জামিন লাভের পর কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বরে ছিলেন ইমরান খান। আদালত চত্বর ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যেন তাঁকে নতুন করে গ্রেপ্তার না করতে পারে, তার লিখিত আদেশ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করেন তিনি। এর মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তা ইমরানকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ভবন থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন।
এ সময় পুলিশের উদ্দেশে ইমরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ১৫ মিনিটের মধ্যে ইসলামাবাদের রাস্তা খুলে না দিলে তিনি তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন। এরপরই পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তাঁদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আদালত চত্বর ত্যাগ করেন ইমরান।