মাত্র তিন মাস আগেই পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।
ক্ষমতা হারিয়ে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের জন্য মাঠে নামেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান। দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান তিনি। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করেন। এসব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম হয়।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ইমরান মার্কিন ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি দ্রুত নতুন জাতীয় নির্বাচন দাবি করেন।
১৭ জুলাই ইমরান চমক দেখান। ক্ষমতা হারানোর পর তিনি পাকিস্তানের বর্তমান জোট সরকারের বিরুদ্ধে একাকী যে লড়াই চালিয়ে আসছেন, তাতে ইমরান একটা বড় সাফল্য পান।
দেশটির পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের ২০ আসনে উপনির্বাচন হয় ১৭ জুলাই। এই উপনির্বাচনে ১৫টি আসনে জয়লাভ করে পিটিআই।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, পাঞ্জাবের উপনির্বাচনে ইমরানের দলের এই বিজয় দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের জন্য একটা বড় রাজনৈতিক ধাক্কা। অন্যদিকে এই জয় ইমরানকে আবার ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে সুবিধা দেবে।
পাঞ্জাব পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে দলের শক্ত ঘাঁটি এই পাঞ্জাব।
প্রদেশটিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ইমরানের দলের ভূমিধস জয় ছিল অপ্রত্যাশিত। ফলে পাঞ্জাবে ইমরানের দলের বিস্ময়কর সাফল্য শাহবাজ সরকারের জন্য ঝাঁকুনি হয়ে এসেছে।
৯টি দলের বর্তমান জোট সরকারের অবস্থা এমনিতে নড়বড়ে। দেশটির অর্থনীতি পতনশীল। রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতিতে ধুঁকছে পাকিস্তান। দেশটির লাখো মানুষ খাদ্য ও জ্বালানি খরচের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাব। দেশটির বিস্তীর্ণ কৃষিজমি খরার প্রকোপে রয়েছে। অনেক জমি প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে শাহবাজ সরকারকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
উপনির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে ভোটাভুটি হয়। এই পদে জোটের শরিক পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে প্রার্থী করে পিটিআই। তিনি ১৮৬ ভোট পান। শাহবাজের ছেলে হামজা শাহবাজ পান ১৭৯ ভোট। তবে পিএমএল-কিউ প্রধান চৌধুরী সুজাত হোসেন দলের সদস্যদের ভোটদানে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দাবি করে দলটির ১০ ভোট বাতিল করেন ডেপুটি স্পিকার, ফলে মুখ্যমন্ত্রীর পদে টিকে যান হামজা।
বাধ্য হয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে যায় পিটিআই। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে হামজাকে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। রায়ের পর ইমরান-সমর্থিত চৌধুরী পারভেজ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। এই ঘটনা ইমরান ও তাঁর দলের জন্য দ্বিতীয় বিজয়। এই বিষয় শাহবাজ সরকারকে পাকিস্তানে নতুন জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারে।
অবশ্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ দাবি করেন, শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী থাকলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও সহনশীলতা উৎসাহিত হবে।
অন্যদিকে ইমরান পাকিস্তানে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন রানা সানাউল্লাহ। তিনি সতর্ক করে বলেন, তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেবেন না। তাঁরা ইমরানকে রুখে দেবেন।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের বাইরে থেকে সরকারের সমালোচক হিসেবে ইমরান কোনো না কোনোভাবে সুবিধা পাচ্ছেন। এমনকি শাহবাজ তাঁর সরকারের নেওয়া বেশ কিছু নীতি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।
ইমরান খরা ও প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা, দরিদ্র এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন। তিনি গ্রামবাসীদের সমবেদনা জানাচ্ছেন। ক্ষমতায় ফিরলে তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এভাবে গ্রামে তাঁর জনসমর্থন গড়ে উঠছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান শহর এলাকায়ও তাঁর জনসমর্থন গড়ছেন। নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে তিনি শহরে শহরে সভা-সমাবেশ করছেন। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে কথিত বিদেশি ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানাচ্ছেন।
সম্প্রতি ইমরানের ডাকা এক সমাবেশে স্ত্রী-সন্তানসহ হাজির হন রাজা ওয়ালি নামের এক চালক। তাঁর ভাষ্য, ‘তিনিই (ইমরান) এই দেশের একমাত্র সৎ নেতা। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আমাদের কথা চিন্তা করেন, বাকি রাজনীতিবিদেরা সবাই চোর।’
জুতার দোকানের মালিক আমির কুরেশি। তিনি ইমরানের দলের স্বেচ্ছাসেবক। আমির কুরেশি বলেন, ‘আমরা চাই না, পাকিস্তানের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হোক। আমরা শিগগিরই নতুন নির্বাচন চাই। আমরা চাই, তিনি (ইমরান) ফিরে আসুক।’