পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চান আগাম নির্বাচন। তাই দেশটির ফেডারেল সরকারকে চাপে ফেলতে তিনি দুটি প্রাদেশিক পরিষদের আইনসভা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
নির্বাচনের জন্য আরও এক বছর সময় থাকতেই ইমরানের দল নিয়ন্ত্রিত পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক আইনসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজই এগুলো ভেঙে দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের ফেলো ও ‘পাকিস্তান আন্ডার সিজ: এক্সট্রিমিসিম, সোসাইটি অ্যান্ড দ্য স্টেট’–এর লেখক মাদিহা আফজাল বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি।’
পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। ইমরান খানের এই পদক্ষেপে দেশটি নতুন ঝুঁকিতে পড়বে। ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খান বছর শেষে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলেন। অবশ্য ঘোষণা তিনি আগেই দিয়েছিলেন।
গত এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ইমরানকে। নভেম্বরে তিনি গুলিতে আহত হন।
কৌশল কতটা কার্যকর হবে
ইমরান খান ক্ষমতায় না থাকলেও তাঁর দল তেহরিক- ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের মধ্যে দুটিতে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। আর এই দুটি প্রদেশে থাকা ক্ষমতাকেই কাজে লাগাচ্ছেন ইমরান। তবে পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারকে চাপে ফেলতে ইমরানের কৌশল কতটা কাজ করবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলাটা কঠিন।
পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরেছেন ইমরান। এরপরও তিনি ভোটারদের মতামত নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আগাম নির্বাচনের দাবিতে ও ফেডারেল সরকারকে চাপে ফেলতে ইমরান বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করেছেন।
সমাবেশে কাজ না হওয়ায় সরকারকে চাপে ফেলতে প্রাদেশিক পরিষদের আইনসভা ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন ইমরান। পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে আগাম নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা কী বলছেন
বিশ্লেষক মাদিহা আফজাল মনে করেন সমস্যা সমাধানে আদালত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি বলছেন, যদি ইমরান খানের উদ্যোগ সফল হয় তাহলে পাকিস্তানের ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)–এর আভাস অনুসারে তারা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের আয়োজন করবে। সাধারণ নির্বাচন পিডিএম করবে না। তাই ইমরানের পদক্ষেপ সফল হলেও আগাম নির্বাচনের প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইমরানের পিটিআই দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস বাবর এখন ইমরানের সঙ্গে নেই। তিনি বারবার আগাম নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানানোয় ইমরান খানের সমালোচনা করেছেন। বাবর বলেছেন, ইমরান ক্ষমতালোভী। দেশের যখন বিরোধী দলকে পাশে প্রয়োজন তখন তিনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করছেন।
তবে বাবরের সঙ্গে একমত নন ইমরান। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, তিনি দেশের কল্যাণের জন্য যুদ্ধ করছেন। তিনি গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্র সব সময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চলে। ইমরান বলেন, ‘আমি ২৬ বছর ধরে রাজনীতিতে আছি। পাকিস্তানের ইতিহাসে আমার দলের মতো কোনো দল জনপ্রিয়তা পায়নি।’
এটা ঠিক যে ৭০ বছরের ইমরান খান এখনো পাকিস্তানে জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে তাঁর দল আটটির মধ্যে ছয়টি আসনে জিতেছে। ইমরান খান ও তাঁর দল পিটিআইয়ের সাম্প্রতিক সমাবেশগুলো দলীয়ভাবে লংমার্চ নামে পরিচিত। এসব লংমার্চে ইমরান ও তাঁর দলের জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো।
লাহোর থেকে শুরু করে লংমার্চ যাওয়ার কথা ছিল ইসলামাবাদ পর্যন্ত। গত ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে ইমরান খান যোগ দিলে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন। একজন নিহত হন ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এই হামলার জন্য বর্তমান পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেন ইমরান। তবে পাকিস্তানের সরকার ইমরানের এই অভিযোগ নাকচ করেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানকে খুব বেশি সফল বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তান ছিল অর্থনৈতিক সংকটে। একীভূত পাঠ্যক্রম চালুর জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার পদ্ধতিতেও তিনি দেরি করেছেন। তিনি কর বেশি আদায় করেছিলেন। তবে ধনীদের অংশগ্রহণ বাড়াননি।
অক্টোবর মাসে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির দায়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সংসদ সদস্য পদ খারিজ করে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং কোনো সরকারি দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে ইমরান বলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে এ রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পিটিআইয়ের আরেকজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ইমরানের মিত্র সাহিবজাদা জাহাঙ্গীর অবশ্য বাবরের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেছেন যদি স্বচ্ছ নির্বাচন হয় তাহলে ইমরান খান জিতবেন। তিনি বলেন পাকিস্তানের ব্যবস্থা খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত। ইমরান একাই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। আর এ কারণে তাঁরা ইমরানকে সরাতে চান।
আকবর এস বাবর বলেছেন, ইমরান খান কোনো রাজনৈতিক আদর্শ লালন করেন না। তিনি আসলে একজন তারকা। যিনি শুধু খ্যাতি পেতে চান। ইমরান আবার ক্ষমতায় আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
উর্দু ভাষার সংবাদপত্র দ্য ডেইলি জংয়ের সম্পাদক সোহাইল ওয়ারিচ বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলেও ইমরান খান প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছেন না। তাঁর শাসন ভালো নয়। এভাবে চলতে থাকলে তাঁর ক্ষমতায় আসা কঠিন।