পাকিস্তানে ধীরগতির ইন্টারনেট, অভিযোগ সরকারের দিকে

ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতীকী ছবিছবি: এএফপি ফাইল ছবি

পাকিস্তানে কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেটের গতি ধীর পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। গতকাল সোমবার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সাধারণত ইন্টারনেটের গতি যেমন পাওয়া যায় তার তুলনায় এখন গতি অর্ধেকের কম।

এ সমস্যার কারণে লাখো ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ব্যবসায়িক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে দেশজুড়ে অনেকেই অভিযোগ করছেন যে জাতীয়ভাবে একটি ফায়ারওয়াল স্থাপনের কারণে ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যবহারকারীরা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একেবারেই ব্যবহার করতে পারছেন না, নয়তো সীমিত আকারে ব্যবহার করতে পারছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে পার্লামেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারিভাবে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকেই এমন অবস্থা চলছিল। তবে ইন্টারনেটের গতি এখন উল্লেখজনক মাত্রায় ধীর।

ব্যবহারকারীরা দ্রুত ই–মেইল কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাতে পারছেন না। ব্যবসায়ী এবং চিকিৎসকেরা বলছেন, এতে তাঁদের দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে বিবৃতি এবং মেডিকেল রিপোর্ট পেতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহে এক বিবৃতিতে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ইন্টারনেট বিঘ্ন হওয়ার কারণে নাজুক অর্থনীতির দেশটি ৩০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অ্যাসোসিয়েশন আরও অভিযোগ করেছে, সরকার তড়িঘড়ি করে একটি জাতীয় ফায়ারওয়াল বাস্তবায়ন করায় ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে গেছে।

লাহোরের পূর্বাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী শাহজাদ আরশাদ বলেন, ‘বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা হওয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভোগান্তিতে পড়েছে।’

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি পরিচালনা করেন চৌধুরী আরিফ। তিনি বলেন, ‘আগের সপ্তাহের তুলনায় ইন্টারনেটের গতি ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ ধীর। এ অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।’

গত রোববার পাকিস্তানের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী শিজা ফাতিমা বলেছেন, ধীরগতির ইন্টারনেটের পেছনে সরকারের ভূমিকা নেই। নতুন কোনো বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়নি। তিনি বলেছেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কস (ভিপিএন) ব্যবহারের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ফোনগুলো সাইবার স্পেসের সঙ্গে ধীরগতিতে যুক্ত হচ্ছে। তবে কেউ কেউ ফাতিমার ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী উমায়ের হাসান বলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে সংযোগ অস্থিতিশীল থাকবে কি না, তা স্পষ্ট করে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত। ‘সরকারের দিক থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কার করতে হবে...ভিপিএন ব্যবহারের অজুহাত না দেখিয়ে কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।’ বলেন, উমায়ের।

পাকিস্তানের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী শিজা ফাতিমা বলেছেন, সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষ অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার সাইবার ব্যবস্থা হালনাগাদ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ডিজিটাল অধিকারবিষয়ক কর্মী ফারিহা আজিজ ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়া বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।

‘সরকার বলেছে, ইন্টারনেট ধীর হওয়ার পেছনে তাদের হাত নেই। তাহলে কারা এটা করল?’ প্রশ্ন করেন ফারিহা আজিজ।

পাকিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি, যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শাহবাজ শরিফ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। বিভিন্ন মামলায় ইমরান খান কারাগারে আছেন। ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে অস্থিরতা চলছে।