পাকিস্তানের নির্বাচনে সহিংসতা, প্রাণহানিতে ভোট গ্রহণ
ইমরান খানকে ছাড়াই এ নির্বাচন। একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে তিনি কারাগারে।
ভোট গ্রহণ ঘিরে সারা দেশে সহিংসতা, নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন।
পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখায় বিতর্কিত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ছাড়া এ নির্বাচন। ভোট গ্রহণ ঘিরে সারা দেশে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার প্রার্থী। জাতীয় পরিষদ ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। জাতীয় পরিষদে ২৬৬ আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। পরিষদের অতিরিক্ত ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য নির্ধারিত। প্রাদেশিক পরিষদে মোট ৭৪৯টি আসন রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল–এন)।
তবে এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি পাকিস্তানে তুমুল জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। একাধিক মামলায় সাজা পেয়ে তিনি এখন কারাগারে। তাঁর দলের নেতা–কর্মীরাও দমন–পীড়ন ও মামলায়–হামলায় বিপর্যস্ত। নিজেদের দলীয় প্রতীক না পেয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল–এন)। দলটির নেতা নওয়াজ শরিফের প্রতি দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর সমর্থন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমার ভয় একটাই। সেটি হলো আমি যে দলকে ভোট দিচ্ছি, শেষ পর্যন্ত তারা ভোটটি পাবে কি না।নির্মাণশ্রমিক সাইদ তাসাওয়ার
সহিংসতায় নিহত ১২
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গতকাল পাকিস্তানে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল আটটায়। চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। পাকিস্তানের ২৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ভোটার ১২ কোটি ৮০ লাখের মতো। তবে ব্যাপক নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। নির্বাচনে ইমরান খানের অনুপস্থিতি ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল ভোট দিতে এসেছিলেন নির্মাণশ্রমিক সাইদ তাসাওয়ার (৩৯)। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় একটাই। সেটি হলো আমি যে দলকে ভোট দিচ্ছি, শেষ পর্যন্ত তারা ভোটটি পাবে কি না।’
আগের দিন বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রার্থীদের কার্যালয়ের বাইরে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত হন। আহত হন ৪০ জনের বেশি।
নির্বাচন ঘিরে গতকাল পাকিস্তানে ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন ছিল। এরপরও সারা দেশে সহিংসতায় অন্তত ১২ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, নির্বাচনের দিন সারা দেশে ৫১টি হামলা হয়েছে। হামলার বেশি ঘটনা ঘটেছে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যই বেশি।
আগের দিন বুধবার বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রার্থীদের কার্যালয়ের বাইরে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত হন। আহত হন ৪০ জনের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের স্থলসীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইন্টারনেট বন্ধ
গতকাল নির্বাচন চলাকালীন পাকিস্তানে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট সেবা স্থগিত রাখা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির’ কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজা বলেন, নিরাপদ পরিবেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ একটি নির্বাচন হবে—এটাই তাঁর প্রত্যাশা। তবে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট ও মুঠোফোন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধের মাধ্যমে ভোটের দিনের কারচুপি শুরু হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন পিপিপি সাবেক সিনেটর মুস্তফা খোখার। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।