বিক্ষোভ দানা বাঁধছে পাকিস্তানে
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেলুচিস্তানে তরুণ নেতাদের গুম করার অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত তাঁদের মুক্তির দাবি করা হয়েছে। বেলুচিস্তানের গণমাধ্যম দ্য বেলুচিস্তান পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার গুমের ঘটনা ঘটেছে।
দ্য বেলুচিস্তান পোস্ট জানায়, মানবাধিকারকর্মী রশিদ হোসেনের মুক্তির দাবিতে তাঁর পরিবার গত রোববার কোয়েটায় বিক্ষোভ করেছে। ২০১৮ সালে গুম হওয়া মানবাধিকারকর্মী রশিদের মুক্তির দাবি জানান তাঁরা। এ বিক্ষোভে যোগ দেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাঁদের মধ্যে গুম হওয়া অন্য পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেন। এ সময় তাঁরা বেলুচ জনগণের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন রশিদের মা। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে আরব আমিরাতে শ্রমিক ছিলেন। সেখানকার লোকজন তাঁকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেন। এর পর থেকে রশিদ নিখোঁজ। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বারে দ্বারে বিচারের জন্য ঘুরেছি। কিন্তু সবখানে আমরা হতাশ হয়েছি।’
এদিকে পাকিস্তানি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, গত ১০ জুন গুম নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এ ঘটনার শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তান স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছে। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে তাঁরা এ বিক্ষোভ শুরু করে।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চমনেও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, সীমান্ত কড়াকড়ি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁরা বিক্ষোভ করছেন। আফগান সীমান্তে মানুষের যাতায়াত ও বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করার প্রতিবাদে গতকাল সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়।
ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বেলুচিস্তানে সরকারবিরোধী বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেলুচিস্তান প্রদেশে চীন-সমর্থিত বিমানবন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে তুলে ধরেছে।
গতকাল পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন নকভি বেলুচিস্তানে যান। তিনি সেখানকার দায়িত্বরত বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পসের প্রশংসা করে বলেন, দক্ষিণ বেলুচিস্তান সব সময় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রণী এক বাহিনী।
এদিকে পাকিস্তানজুড়ে শক্তি প্রদর্শনের ঘোষণা দিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটআই)। দলীয় শক্তি প্রদর্শনে রাজধানী ইসলামাবাদে আগামী বৃহস্পতিবার সমাবেশ করবে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। কারাবন্দী ইমরান খান দলের নেতাদের এই নির্দেশ নিয়েছেন। গত রোববার এ তথ্য জানান খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গানদাপুরের তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী সাইফ।
ইন্টারনেট বন্ধ করেনি সরকার
কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহারে ধীরগতি চলছে। এর পেছনে কে দায়ী বা কী কারণে এমনটা হচ্ছে, তা নিয়ে চলছে এখন জোর বিতর্ক। দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেটে যে ধীরগতি তার পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই।
সরকারবিরোধীরা বলছেন, পাকিস্তান সরকার এখন চীন সরকারের মতো ইন্টারনেটে ‘ফায়ারওয়াল’ তৈরি করতে চাইছে। উদ্দেশ্য, অনলাইন জগতের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা। দেশটির সরকার থেকে অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; বরং বলেছে, ভিপিএনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এমনটা হচ্ছে।
পাকিস্তানসহ এশিয়ার অনেক দেশে বিপ্লব, বিক্ষোভ ও জন-অসন্তোষ দমনের সময় প্রশাসন থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ঘটনা নিয়মিত ঘটতে দেখা যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গ্রেপ্তার এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে গত বছর থেকেই পাকিস্তানে থেমে থেমে বিক্ষোভ হচ্ছে। তখন থেকেই দেশটির সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে রেখেছে। বিক্ষোভ সড়ক থেকে ডিজিটালজগতে ছড়িয়ে পড়ার পর ইন্টারনেটের গতিও ধীর করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানে, বিশেষ করে ইমরান খানের সমর্থকদের মধ্যে এক্স অত্যন্ত জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাকিস্তানিদের অন্যতম ইমরান খান, তাঁর অনুসারী প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ।
সমাজকর্মীরা এ বিষয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। পিটিশনে তাঁরা ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ করেছেন।