দলত্যাগী সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান ইমরান খান
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও দেশটির সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর দলের সংসদ সদস্যদের দলত্যাগের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, এই সংসদেরা যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পদক্ষেপ চেয়েছেন ইমরান খান।
পিটিআইয়ের আইনজীবী বাবর আওয়ান দলছুট সাংসদদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা দেন। এ বিষয়ে তিনি সব বিচারপতিকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গঠনেরও অনুরোধ জানান।
ইমরান খানের করা ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লোর ক্রসিং করা আইনপ্রণেতারা সংবিধানের ৬৩–এ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দলত্যাগের কারণে বা হাউসে (নিজ দলের পক্ষে) ভোটদানে বিরত থাকলে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য অযোগ্য হতে পারেন। নির্বাচন নিয়ে দলের জারি করা কোনো নির্দেশের বিপরীতে গেলেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হবেন।
ইমরানের যুক্তি, জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদের সব সদস্য সংসদের প্রথম অধিবেশনে শপথ গ্রহণ করেন। শপথে স্পষ্ট বলা আছে যে তাঁরা সংবিধান মেনে চলবেন। কিন্তু দলীয় নীতি থেকে বিচ্যুত হলে একজন সদস্য বাস্তবিক অর্থে সংবিধান থেকেই বিচ্যুত হন ও শপথ ভঙ্গ করেন।
সংবিধানের ৬৩-এ ধারা অনুযায়ী, দলত্যাগের আগে একজন আইনপ্রণেতা যেন পার্লামেন্টে তাঁর বিদ্যমান আসন থেকে পদত্যাগ করেন, তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান।
ডনের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিআই নেতা ফারুক হাবিব বলেছেন, তাঁর দলের ১২৩ আইনপ্রণেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন জাতীয় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত স্পিকার কাসিম খান সুরি। পিটিআই আইনপ্রণেতাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর এখন সাধারণ নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ১৭২ আসন প্রয়োজন। পিটিআইয়ের ১২৩ সাংসদের গণপদত্যাগের আগে দলটির আসন ছিল ১৫৫। দলছুট ২০ জনকে দলের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ১২ জনের অবস্থান পরিষ্কার নয়।
এদিকে ইমরান খান পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনে পৃথক চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, পিটিআইয়ের কোনো সদস্যকে কোনো সংসদীয় কমিটিতে মনোনীত করা যাবে না। কারণ, দলের আইনপ্রণেতারা ইতিমধ্যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) গতকাল বুধবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ না করেই নির্বাচন কমিশনে পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতাদের পদত্যাগপত্র পাঠানোর জন্য জাতীয় পরিষদের সচিবালয়কে চাপ দেওয়ায় কাসিম সুরিকে অভিযুক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করার পর বর্তমানে সরকারে থাকা ওই দুই দলের অভিযোগ, কাসিম সুরি সরকারের সঙ্গে পরামর্শ না করে পিটিআই সাংসদদের পদত্যাগপত্র অনুমোদন করার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
মাসখানেক আগে থেকেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে সম্প্রতি ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণায়। সুপ্রিম কোর্ট এ ঘোষণাকে ‘অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে পার্লামেন্ট বহাল রাখেন।
নানা নাটকীয়তার পর ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। ইমরানকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ১৭২ আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার ছিল। ইমরানের বিপক্ষে ভোট দেন ১৭৪ জন। এরপর গত সোমবার পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
ইমরান খানের তরফে তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্সের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার বলেছেন, গত মাসে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর জারি করা বিবৃতিতে ষড়যন্ত্র শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাবর এ কথা বলেন। সাংবাদিকেরা বিদেশি ষড়যন্ত্র নিয়ে ইমরান খানের দাবির বিষয়ে সেনা নেতৃত্বের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলেন বাবরকে।
রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি আইএসপিআর বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সহায়তা করতে সেনাপ্রধানের কাছে গিয়েছিলেন।
ডিজি আইএসপিআর আরও বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কথা বলতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই সেনাপ্রধান ও ডিজি আইএসআই প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনটি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এর একটি ছিল পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে। অন্য দুটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া নিয়ে। এ ক্ষেত্রে এস্টাবলিস্টমেন্টের (সেনাবাহিনী) পক্ষ থেকে কোনো বিকল্প দেওয়া হয়নি।’