রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
সিকে প্রভাব খাটানোর আহ্বান ইউক্রেনের
সি চিন পিং মস্কো সফরে যুদ্ধ থামানোর জন্য তাঁর প্রভাব খাটাবেন, এটাই প্রত্যাশা ইউক্রেনের।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বেইজিংকে তাঁর প্রভাব খাটানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। গতকাল সোমবার তিন দিনের মস্কো সফর শুরু করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এরপর ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর মস্কো সফরে যুদ্ধ থামানোর জন্য প্রভাব খাটাবেন, এটাই তাদের প্রত্যাশা ।
সি মস্কো পৌঁছানোর পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট মস্কো সফরের ওপর তীক্ষ্ণভাবে চোখ রাখছে ইউক্রেন। আমরা আশা করি, মস্কোর ওপর বেইজিং তার প্রভাব খাটিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আগ্রাসন বন্ধ করবে।’
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের রাশিয়া সফরে ইউক্রেনের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বেইজিংয়ের দেওয়া নির্ধারিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। গত মাসে চীনের পক্ষ থেকে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব দেওয়া হয়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলেছেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। সি তাঁর সফরে জেলেনস্কিকে ফোনকল করতে পারেন।
গতকাল দুপুরে সি চিন পিং বিশেষ উড়োজাহাজে করে মস্কোর নুকোভো বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি চেরনিশেঙ্কো। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিমানবন্দরে নেমে সি বলেন, ‘এ সফর ফলপ্রসূ হবে এবং চীন-রাশিয়া সম্পর্কের সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়নে নতুন গতি দেবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী। অস্থিরতা ও রূপান্তরের বিশ্বে চীন জাতিসংঘের মূল বিষয়গুলো ধরে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে রক্ষায় রাশিয়ার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।’
সি বলেন, চীন ও রাশিয়া ভালো প্রতিবেশী ও বিশ্বস্ত অংশীদার। এই দুই দেশ একত্রে সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাবাদ রক্ষা করবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ইউক্রেন থেকে শিশুদের ধরে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়াসহ দেশটিতে (ইউক্রেন) যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে পুতিনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর কয়েক দিনের মাথায় সির মস্কো সফরকে সমর্থন হিসেবে দেখছে মস্কো।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হচ্ছে, বেইজিং মস্কোয় অস্ত্র রপ্তানি করার কথা ভাবছে। তবে বেইজিং এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে বেইজিং নিরপেক্ষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চায়। সি গতকাল তাঁর সফরে বলেছেন, তাঁর সফর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি সৃষ্টি করবে।
ধারণা করা হচ্ছে, সি ও পুতিন চীনের দেওয়া ১২ দফা শান্তিচুক্তি নিয়ে কথা বলবেন। আজ মঙ্গলবার দুই নেতার আলোচনা শুরুর আগে গতকাল তাঁরা অনানুষ্ঠানিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তাঁরা একত্রে রাতের খাবার খান।
এদিকে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি পশ্চিমা দেশগুলো ‘যৌক্তিক’ বললেও চীন তাতে সায় দেয়নি। বেইজিং গতকাল বলেছে, আইসিসির রাজনীতিকরণ এবং দ্বৈত নীতি এড়িয়ে চলা উচিত। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপ্রধানদের দায়মুক্তির নীতির বিষয়টিকে সম্মান জানাতে হতো। ইউক্রেন সংঘাতের সমাধান সংলাপ ও আলোচনায় সম্ভব।