ফ্যাক্টচেকাররা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, আরও বেশি মুক্ত মতপ্রকাশের সুযোগ দেবে মেটা: জাকারবার্গ
বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিলেন ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। নীতিগত এই পরিবর্তনের ফলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডে এখন থেকে আরও বেশি রাজনৈতিক আধেয় দেখা যাবে। এগুলোর মূল প্রতিষ্ঠান মেটা রাজনৈতিক কনটেন্টের ক্ষেত্রে এখন থেকে আরও বেশি সুপারিশ করবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ আজ মঙ্গলবার এক ভিডিও পোস্টে এ ঘোষণা দেন। ভিডিও পোস্টের শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘মুক্ত মতপ্রকাশ ঘিরে আমাদের শিকড়ে ফেরার সময় এখন। আমরা ফ্যাক্টচেকারগুলোর পরিবর্তে এখন কমিউনিটি নোট ব্যবহার করব। আমাদের নীতিগুলোকে আরও সরলীকরণ করছি এবং ভুল কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মেটার প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ। এরপর তিনি মুক্ত মতপ্রকাশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
রাজনৈতিক আধেয় প্রকাশের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হচ্ছে। তিনি এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের যেসব তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব (ফ্যাক্টচেকার) ছিল, এগুলোর ব্যবহার কমিয়ে এনে কমিউনিটি নোটস ব্যবহারের কথা বলেছেন। অর্থাৎ, এখন থেকে এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেবে মেটা। কমিউনিটি নোটস আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) পরিচিত ফিচার।
এক্সের মালিকানা রয়েছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের হাতে। এ প্ল্যাটফর্মে বিতর্কিত পোস্টে সতর্কতা এবং প্রসঙ্গ যোগ করার বিষয়টি ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে।
জাকারবার্গ ফ্যাক্টচেকারদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, মেটার ফ্যাক্টচেকাররা রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি পক্ষপাতদুষ্ট থেকেছে। তারা আস্থা তৈরির বদলে অনেক বেশি আস্থা নষ্ট করেছে।
জাকারবার্গ বলেন, মেটার আধেয় সম্পাদনাকারী কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাসে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেখানে মেটার পক্ষপাত নিয়ে উদ্বেগ কিছুটা কম।
জাকারবার্গ অবশ্য স্বীকার করেছেন, মেটা এখন থেকে আধেয় বা কনটেন্ট ফিল্টার করবে কম। এতে অনেক খারাপ আধেয় মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রকাশ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মেটা ব্যবহারকারী ৩০০ কোটির বেশি। জাকারবার্গের বিবৃতিতে বলা হয়, অভিবাসন ও লিঙ্গের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ ছিল, সেগুলো থেকে মুক্তি পাবে মেটা। যেসব দেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের ওপর আরও বেশি সেন্সরশিপের জন্য চাপ দিচ্ছে, তাদের ওপর চাপ বাড়াতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করবে মেটা।
মেটার পক্ষ থেকে এমন সময়ে এ ঘোষণা দেওয়া হলো, যখন প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের পদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ পদত্যাগ করলেন এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত রিপাবলিকান সদস্য জোয়েল কাপলান।
জাকারবার্গ তাঁর পাঁচ মিনিটের বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সরকার ও তাদের উত্তরাধিকার গণমাধ্যমগুলোর বেশি করে সেন্সর করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এর অনেক কিছুই স্পষ্টতই রাজনৈতিক। এর পাশাপাশি সেখানে মাদক, সন্ত্রাস, শিশু নির্যাতনের মতো খারাপ বিষয়ও রয়েছে। এসব বিষয় আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। আমি নিশ্চিত করতে চাই, এগুলো আমরা দায়িত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।’