বিষাক্ত আংটি দিয়ে বাদশাহ আব্দুল্লাহকে খুন করতে চেয়েছিলেন যুবরাজ সালমান

সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রয়টার্সের ফাইল ছবি

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রাশিয়ার তৈরি একটি ‘বিষাক্ত আংটি’ ব্যবহার করে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহকে খুন করতে চেয়েছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকান সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস-এর ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাদ আল-জাবরি বলেন, তিনি এমন একটি ভিডিওর কথা জানেন, যেখানে বাদশাহ আবদুল্লাহকে চাইলেই খুন করতে পারেন বলে দম্ভ করেছিলেন বিন সালমান।

সাক্ষাৎকারে সাদ আল-জাবরি বলেন, ওই সময় সালমান বলেছিলেন, তাঁর কাছে রাশিয়ার এমন একটি বিষাক্ত আংটি আছে, যা দিয়ে করমর্দন করেই সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহকে খুন করা সম্ভব। বাবার জন্য সৌদি আরবের সিংহাসনে আরোহণের পথ পরিষ্কার করতেই তিনি এই খুন করতে চান বলে ২০১৪ সালে চাচাতো ভাই ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিন নায়েফকে জানিয়েছিলেন বিন সালমান।

বিবিসির তথ্যমতে, সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে তখন সৌদি রাজ পরিবারের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছিল।

এদিকে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে জাবরিকে নিন্দিত এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সিবিএসকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৌদি বলছে, জাবরির কথা বাড়িয়ে বলার ইতিহাস আছে।

সাক্ষাৎকারে জাবরি জানান, মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তখন বিন সালমান বলেছিলেন, ‘আমি বাদশাহ আব্দুল্লাহকে হত্যা করতে চাই। রাশিয়া থেকে একটি বিষাক্ত আংটি পেয়েছি। তাঁর সঙ্গে শুধু করমর্দন করলেই যথেষ্ট। তিনি শেষ হয়ে যাবেন।’

সাক্ষাৎকারে জাবরি আরও বলেন, ‘তিনি দম্ভ করেও এটি বলতে পারেন। তবে তিনি এটি বলেছেন এবং আমরা তাঁর এ কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম।’

জাবরি বলেন, বৈঠকটি রাজদরবারে গোপনীয়তার সঙ্গে হয়েছিল। তবে গোপনে বৈঠকটি ভিডিও করা হয় এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের দুইটি কপি কোথায় আছে তা তিনি জানেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ। তাঁর সৎ ভাই এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তখন ক্রাউন প্রিন্স করেছিলেন বাদশাহ সালমান। এরপর ২০১৭ সালে বিন নায়েফের জায়গায় ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ বিন সালমান।

বিবিসির তথ্যমতে, বিন নায়েফকে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি গৃহবন্দী করা হয় বলে খবর বের হয়েছিল। এরপর গত বছর বেশ কিছু অভিযোগে তাঁকে আটক করে সৌদি সরকার। বিন নায়েফকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সাদ আল-জাবরি কানাডায় পালিয়ে যান।

সাক্ষাৎকারে যুবরাজ সালমান সম্পর্কে জাবরি বলেন, দেশের ডি ফ্যাক্টো শাসক এবং বাদশাহ সালমানের ছেলে মধ্যপ্রাচ্যে অসীম সম্পদের অধিকারী। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, খুনি, নিজ দেশের জনগণ, আমেরিকা এবং সারা বিশ্বের জন্যই তিনি হুমকি।

এদিকে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজি খুন হওয়ার পর জাবরি তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন যে, সৌদি ‍যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁকে হত্যার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে জাবরি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা তাঁর এক বন্ধু তাঁকে এ সতর্কবার্তা দিয়েছেলিন। বলেছিলেন যে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাঁকে খুন করতে মোহাম্মদ বিন সালমান একটি ‘হিট টিম’ পাঠাচ্ছেন।