ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে যত সাংবাদিকের
পশ্চিম তীরের জেনিনে ১১ মে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৫১ বছর বয়সী এ সাংবাদিক ঘটনার দিন সুরক্ষিত পোশাক পরে ছিলেন। তাঁর পোশাকে প্রেস লেখা ছিল। অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শিরিন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর গায়ে লাগে, মারা যান শিরিন। এ ঘটনায় আলী আল সামুদি নামের আরেক সাংবাদিক পিঠে গুলিবিদ্ধ হন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
ফিলিস্তিনের তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০০০ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৪৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের তথ্যানুসারে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৫৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় যেসব সাংবাদিক মারা গেছেন, তার একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে আল–জাজিরা।
গত বছরের মে মাসে গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। তখন ইসরায়েলি বিমান হামলায় আল–আকসা রেডিও স্টেশনের এক সংবাদকর্মী নিহত হন। তাঁর নাম ইউসেফ আবু হোসেন। তাঁর স্বজন ও সহকর্মীরা বলেন, গাজা উপত্যকার একটি বাড়িতে থাকতেন ইউসেফ। তাঁর বাড়িটি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল।
ওই বছর ১০ থেকে ২১ মে পর্যন্ত ১১ দিনের হামলায় কমপক্ষে ২৬০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হন। এর মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলি হামলায় একটি ভবন বিধ্বস্ত হয়। ওই ভবনে আল–জাজিরা ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ছিল।
২০১৮: এক সপ্তাহে দুই সাংবাদিক নিহত
২০১৮ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সপ্তাহে দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হন। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল গাজা সীমান্তে একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ফটো সাংবাদিক আহমদ আবু হুসেইন। ২৪ বছর বয়সী এ সাংবাদিকের পেটে গুলি লেগেছিল। তাঁর পরনে প্রেস লেখা সুরক্ষিত পোশাক ছিল। এর কয়েক দিন আগে গাজাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইন মিডিয়ার ফটো সাংবাদিক ইয়াসির মর্তুজা আহত হন। আহত অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল মারা যান তিনি। তাঁর পরনেও প্রেস লেখা সুরক্ষিত পোশাক ছিল।
২০১৪ সাল: ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর
২০১৪ সালের ৮ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত গাজায় প্রচণ্ড রকমের হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলায় কমপক্ষে ২ হাজার ১ শ মানুষ নিহত ও ১১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। ফিলিস্তিনের সাংবাদিকদের জন্যও বছরটি প্রাণঘাতী ছিল। ফিলিস্তিনের তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৪ সালে কমপক্ষে ১৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন—আবদুল্লাহ ফাদেল মর্তুজা, আলী শেহতা আবু আফাস, হামাদা খালেদ মুকাত, সিমোনে ক্যামেলি, শাদি হামদি আয়াদ, আবদুল্লাহ নাসর খালিল ফাজ্জান, মুহাম্মদ মাজেদ দাহার, মুহাম্মদ নুর আল-দীন মুস্তফা আল দিরি, রামি ফাতিহ হুসেইন রায়ান, সামেহ মুহাম্মদ আল আরিয়ান, আহেদ আফিফ জাকুত, ইজ্জাত সালামা দাহির, বাহা আল দ্বীন আল গারিব, আবদু আল রহমান জিয়াদ আবু হেইন, খালেদ রিয়াদ মুহাম্মদ হামাদ, নাগলা মাহমুদ আল-হাজ, হামিদ আবদুল্লাহ শিহাব।
২০০০-২০১২ সাল: কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের মৃত্যু
২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিক নিহত হন। তাঁরা হলেন—মুহাম্মদ মুসা আবু ঈশা (২০১২), মাহমুদ আলী আহমদ আল কুমি (২০১২), হুসাম মুহাম্মদ সালামা (২০১২), সেভদেত কিলিচলার (২০১০), আলা হাম্মাদ মাহমুদ মুর্তজা (২০০৯), ইহাব জামাল (২০০৯), হাসান আল ওয়াহিদি (২০০৯), বাসিল ইব্রাহিম ফারাজ (২০০৯), ওমর আবদেল হাফিজ আল সিলাবি (২০০৯), ফাদেল সোভি শানা (২০০৮), হাসান জিয়াদ শাকুরা (২০০৮), মুহাম্মদ আবদেল আবু হালিমা, খালিল মুহাম্মদ খালিল আল জাবিন (২০০৪), জেমস হেনরি দোমিনিক মিলার (২০০৩), নাজিহ আদেল দারওয়াজা (২০০৩), ফাদি নাশাত আলাউনেহ (২০০৩), ইসাম মিথকাল হাম, জা আল তালাবি (২০০২), ইমাদ সোভি আবু জাহরা (২০০২), আমজাদ বাহজাত আল আলামি (২০০২), জামিল আবদু আল্লাহ নাওয়ারা (২০০২), আহমেদ নোমান (২০০২), রাফায়েল চিরিলো (২০০২), মুহাম্মদ আবদুল কারিম আল বিশাবি (২০০১), ওতমান আবদুল কাদের আল কাতানি (২০০১), আজিজ ইউসেফ আল তানিহ (২০০০)।
সম্প্রতি সাংবাদিক আবু আকলেহ নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর জবাবদিহির ঘাটতির বিষয়টি সামনে এসেছে। আবু আকলেহর মৃত্যুর ঘটনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ তদন্ত পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বুধবার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক ওমর শাকির আল–জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস হয় না।