জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে এখন থেকে ইহুদিরাও ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ প্রার্থনা করার অনুমতি পাবে বলে চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের একজন বিচারক রায় দিয়েছেন। এ রায়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে মুসলিম বিশ্বেও। খবর আল-জাজিরা ও এএফপির।
মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান বলে বিবেচিত। আর ইহুদিদের কাছে এটি খ্যাত টেম্পল মাউন্ট নামে। তারাও এটিকে তাদের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। বছরের পর বছর চলতে থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে এই পবিত্র মসজিদ। ইসরায়েলের জবরদখল করা পূর্ব জেরুজালেমে এটির অবস্থান।
গত মঙ্গলবার জেরুজালেমের ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টের বিচারক বিলহা ইয়াহালোম এক আদেশে ওই মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা করার অনুমতি দেন। এ আদেশকে অবৈধ উসকানি বলে আখ্যায়িত করেছে মসজিদটির তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ওয়াকফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল। আর ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতেয়াহ এই মসজিদে জোর করে প্রবেশের যেকোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনিরা বলেছেন, এই পদক্ষেপ আল-আকসার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট আগ্রাসন ও খোলাখুলি যুদ্ধের ঘোষণা। ইসরায়েলি আদালতের আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে একে আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা মিসরের।
আদালতের ওই সিদ্ধান্তের ফলাফল হিসেবে ভয়াবহ পরিস্থিতি শুরু হতে পারে আশঙ্কায় ইসরায়েলি পুলিশ পর্যন্ত এ রায় নিয়ে আপিল করেছে। আরেয়াহ লিপ্পো নামের একজন ইহুদি পণ্ডিতের দায়ের করা এক পিটিশনের জবাবে মঙ্গলবার এ রায় দেওয়া হয়।
গত মে মাসে আল-আকসার কাছাকাছি এলাকা থেকে কিছু ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করার ইসরায়েলি উদ্যোগের জের ধরে এই মসজিদ প্রাঙ্গণে উগ্রপন্থী ইহুদিদের সঙ্গে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ বাধে। পরে টানা ১১ দিন ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় বহু ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোক হতাহত হন।
ইসরায়েলি আদালতের রায়কে সর্বসম্মতভাবে নিন্দা জানিয়েছেন মুসলিম নেতারা। আল-আকসার পরিচালক শেখ ওমর আল-কিসওয়ানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইহুদিদের প্রার্থনার অনুমতি একধরনের উসকানি ও এতে আল-আকসার পবিত্রতা বিনষ্ট হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের কোনো বৈধতা নেই। কেননা, আমরা আল-আকসা নিয়ে ইসরায়েলি আইনকে স্বীকৃতি দিই না।’
মিসর আদালতের এ আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে এটিকে আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছে। সেই সঙ্গে এর পরিণতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি।
জর্ডানের জেরুজালেমবিষয়ক রয়্যাল কমিটির কর্মকর্তা আবদুল্লাহ কানান ওই আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে একে আল-আকসার ওপর হামলা বলে অভিহিত করেছেন। জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পেত্রা জানায়, আবদুল্লাহ কানান ফিলিস্তিনি জনগণ ও আল-আকসার পবিত্রতার বিরুদ্ধে আদালতের এই আদেশকে দৃঢ়ভাবে রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
মুসলিম দেশগুলোর বৈশ্বিক জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ইসরায়েলের তথাকথিত ‘জেরুজালেম আদালতের’ সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আল-আকসা পরিদর্শন করা নাসিফ ইসমাইল নামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, এখানে ইহুদিদের প্রার্থনার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন। তাঁর কথায়, এই পবিত্র মসজিদ স্রষ্টার কাছ থেকে মুসলিমদের দেওয়া এক উপহার। মুসলিম ছাড়া অন্য কারও এখানে প্রার্থনা করার অধিকার নেই।
আর গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস বলেছে, এই পদক্ষেপ আল-আকসার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট আগ্রাসন ও খোলাখুলি যুদ্ধের ঘোষণা।
ইসরায়েলি আগ্রাসন জোরদার হওয়ার আশঙ্কা
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, আদালতের ওই রায়ে ইসরায়েলি আগ্রাসন বাড়ার আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা। এমন প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী শতেয়াহ আল-আকসা মসজিদের মর্যাদা প্রশ্নে বিদ্যমান স্থিতাবস্থা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।