গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে হামাস, দাবি কাতারের

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকাছবি: এএফপি ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির প্রস্তাবে ‘প্রাথমিক’ অনুমোদন দিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। চুক্তির আওতায় গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির কথা বলা আছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি গতকাল বলেন, সম্প্রতি প্যারিসে আলোচনার মধ্য দিয়ে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও মিসরের কর্মকর্তারা একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তৈরি করেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এখন হামাসের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।

আনসারি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি–সংক্রান্ত ‘ভালো খবর’ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এএফপিকে বলেছেন, ‘চুক্তির রূপরেখা কী হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ আছে। কাতারের বিবৃতিটি তাড়াহুড়া করে দেওয়া হয়েছে এবং এটি সত্য নয়।’

এর আগে হামাসের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছিল, এ যুদ্ধবিরতির জন্য তিন ধাপের পরিকল্পনা আছে। শুরুতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার মানুষদের জন্য আরও বেশি করে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ওই পর্যায়ে শুধু হামাসের হাতে আটক থাকা নারী, শিশু ও ষাটোর্ধ্ব অসুস্থ ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে কিছুসংখ্যক ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।

তবে তথ্যগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই সূত্র তাঁর নাম প্রকাশ না করার জন্য এএফপিকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এএফপি ইসরায়েলের সরকারি হিসাব সূত্রে জানিয়েছে, ওই দিনের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে কিছুসংখ্যক জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। আর ২৭ জন মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়। ইসরায়েলের দাবি, এখনো ১৩২ জন হামাসের হাতে জিম্মি আছেন।

হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলের বাহিনী। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান এ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

হামাসের গণমাধ্যম কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে গোলা হামলা ও অভিযান চালানোর খবর পেয়েছেন তাঁরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর ১০৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় চার মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা ‘বসবাসের অনুপযোগী’ হয়ে পড়েছে। সেখানে খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবারই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে।