শরীর দুর্বল হলেও মন ইস্পাতের মতো কঠিন: নার্গিস মোহাম্মদি
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি বলেছেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে তাঁর শরীর দুর্বল হতে পারে, তবে তিনি মানসিকভাবে এখনো ইস্পাতের মতো শক্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের ম্যাগাজিন এল তাঁর এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। তাতে নিজের মানসিক দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেছেন নার্গিস।
গত ২৫ বছরে নার্গিস মোহাম্মদিকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে কারাবন্দী হন ৫২ বছর বয়সী এই মানবাধিকারকর্মী। ইরানে মৃত্যুদণ্ড ও নারীর জন্য বাধ্যতামূলক হিজাবনীতির বিরোধিতা করার বিষয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
হাড়ে অস্ত্রোপচার করায় গত ৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য এভিন কারাগার থেকে তিন সপ্তাহের কারামুক্তি দেওয়া হয় নার্গিস মোহাম্মদিকে। এ সময় তিনি তেহরানের এভিন কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ে এল ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দেন।
লিখিত ও ভয়েস বার্তায় এল ম্যাগাজিনের প্রশ্নের উত্তর দেন নার্গিস। সেখানে তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে বারবার কারাগারে গিয়ে আমার শরীর দুর্বল হয়েছে এটা সত্যি, কিন্তু আমার মন শক্ত হয়েছে।’
নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, তিনি তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করতে চান। ইতিমধ্যে এটি লেখা হয়ে গেছে। এখন তিনি তাঁর দ্বিতীয় বই লিখছেন। বইটি মূলত ইরানের কারাগারে বন্দী নারীদের যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়ে।
নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, এভিন কারাগারে নারীদের জন্য একটি আলাদা ইয়ার্ডে ৭০ জন বন্দীকে রাখা হয়। তাঁরা বিভিন্ন বয়সী ও বিভিন্ন পেশার। সেখানে সাংবাদিক, লেখক, অধিকারকর্মীও রয়েছেন। সেখানে তাঁদের নির্যাতনের একটি প্রচলিত অস্ত্র হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা। তিনি বলেন, ‘কারাগারে আমাদের ১৩ জনকে একটি কক্ষে রাখা হয়। এটি এমন একটি স্থান, যেখানে রাজনৈতিক বন্দীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে থাকা বন্দীদের নির্যাতনের শিকার ও যৌন সহিংসতার ঘটনা নথিবদ্ধ করেছি।’
নার্গিস মোহাম্মদি আরও বলেন, কঠোর পরিণাম জেনেও বন্দীরা এখনো প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি ৭০ জন বন্দীর মধ্যে ৪৫ জন একত্র হয়ে কারাগারের মধ্যেই বিক্ষোভ করেন। পাখসান আজিজি ও ভারিশে মোরাদি নামের দুই কুর্দি মানবাধিকারকর্মীর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করা হয়। পরে কারাগারে সামান্য অবাধ্যতার ঘটনায় বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।