হামাসকে ধ্বংস করার আগে যুদ্ধ বন্ধ নয়: নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। জিম্মি উদ্ধারে দেশের অভ্যন্তরেও চাপে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এরপরও যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো ধরনের গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ধ্বংস করার আগপর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে না।
গত সোমবার গাজায় লড়াইরত ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে দেখা করেন নেতানিয়াহু। পরে নিজ দল লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতাদের তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ হতে এখনো অনেক দেরি আছে। তাঁর সরকার যুদ্ধ থামাতে সম্মত হতে পারে, সংবাদমাধ্যমের এমন গুঞ্জনও নাকচ করে দেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা থামছি না। এই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ না আমরা বন্ধ করছি; এর সামান্য আগেও নয়।’
দেশ-বিদেশে চাপে নেতানিয়াহু
যুদ্ধ বন্ধে দেশ-বিদেশে চাপের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধবিরতির দাবিতে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন ঘিরে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়।
বড়দিনের ভাষণে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররাও গাজায় ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
এদিকে দেশেও চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। গাজায় বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের উদ্ধারে তাঁদের পরিবারগুলো বিক্ষোভ জোরদার করেছে। গত সোমবার পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় দুয়ো দেন জিম্মিদের কয়েকজন স্বজন। তাঁরা অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
নেতানিয়াহুকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ। ইসরায়েলি একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের মাঝপথে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন ভালো কিছু নয়। কিন্তু এমন একজনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আরও ক্ষতিকর। তিনি দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারেন না।’
হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েল ‘হেরে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ড্যান হালুৎজ। তিনি বলেন, কেবল নেতানিয়াহু পদত্যাগ করলেই বিজয় অর্জিত হতে পারে।
হাইফায় সরকারবিরোধী সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সাবেক এই সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত লোকজনের অনেকেই তাঁর এ বক্তব্যের প্রশংসা করেন।
বড়দিনে ২৫০ জনকে হত্যা
২৫ ডিসেম্বর ছিল যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন বড়দিন। যিশু জন্মগ্রহণ করেন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বড়দিনের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু মাঘাজি শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলায় শতাধিক নিহত মানুষ হন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়া ২৪০ জনকে আটক করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে তারা। স্থল অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার নাগাদ ১৬০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ২০ হাজার ৯১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৯১৮ জন। নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজারের বেশি।