আটক শিশুদের রাখা হচ্ছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে’

পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে এক মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল ইরান
ফাইল ছবি: এএফপি

ইরানের রাজধানী তেহরানে পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। চলমান এ বিক্ষোভে বেশ কিছু শিশুও নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক শ। বিক্ষোভ থেকে আটক কিছু শিশুকে রাখা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে’।

ইরানে নারীদের জন্য পোশাকবিধির বিষয়টি দেখভাল করে ‘নীতি পুলিশ’। এ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নীতি পুলিশ সেপ্টেম্বরে মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে ঘিরে প্রায় এক মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল দেশটি।

প্রত্যাশিত পরিবর্তন না আসায় ইরানি তরুণেরা বিক্ষুব্ধ। তাঁরাই এ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূলত গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে এ শতাব্দীর প্রথম দশকে জন্ম নেওয়া তরুণ–কিশোরেরা চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হলি ড্যাগরেস এক টুইটে বলেন, ‘ইরানের কিশোর-কিশোরীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অনলাইনে তাঁরা এই বিষয়টি কোনো কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন না।’ তরুণী ও কিশোরীরা রাজপথে নেমে আসছেন। তাঁরা চুল ঢাকছেন না। মুষ্টিবদ্ধ হতে স্লোগান দিচ্ছেন— ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ এবং ‘একনায়ক নিপাত যাক’।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএ ইরানের চলমান বিক্ষোভে ১৮ জন অপ্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল ১২ বছরের এক কিশোর।

তবে শিশুদের মৃত্যুর এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তেহরানভিত্তিক সংগঠন শিশু অধিকার সুরক্ষা সমাজ জানিয়েছে, বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আটক শিশুদের কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের পরিবার কিছু জানতে পারছে না। যথাযথ আইনি প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই তাদের মামলার কার্যক্রম চলছে।

মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী হাসান রাইসি বলেন, মাদকসংক্রান্ত অপরাধে জড়িত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত বন্দিশিবিরগুলোতে আটক শিশুদের রাখা হচ্ছে। গত বুধবার লন্ডনভিত্তিক ইরান ওয়্যার তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘এটি খুবই উদ্বেগের একটি বিষয়।’

আরও পড়ুন

হাসান রাইসি বলেন, বয়স ১৮ বছরের কম এমন কাউকে কোনোভাবেই ১৮ বছরের বেশি বয়সী অপরাধীর সঙ্গে রাখা যাবে না। এটা আইনি বাধ্যবাধকতা, কোনো সুপারিশ নয়। ১২-১৩ ও ১৮-১৯ বছর বয়সী প্রায় ৩০০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এই আইনজীবী বিস্তারিত কিছু বলেননি।

রাজপথের বাইরে ও শ্রেণিকক্ষের ভেতর থেকেও প্রতিবাদী শিশুদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে বলে বুধবার সংস্কারবাদী পত্রিকা শার্ঘ-এ প্রকাশিত ইরানের শিক্ষামন্ত্রী ইউসেফ নুরির মন্তব্য থেকে জানা গেছে। কত স্কুলশিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। আমি নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিতে পারছি না।’ নুরি বলেন, আটক শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, সমাজবিরোধী হয়ে ওঠা ঠেকাতে তাদের সংশোধন ও পুনর্বাসন করা।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সোমবার বলেছে, ইরানে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের হত্যা, আহত ও আটক করার খবরে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

আরও পড়ুন