যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই লেবাননে চলছে হামলা

দক্ষিণ লেবাননের বালবেক শহরে ইসরায়েলের হামলার পর ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়ফাইল ছবি: এএফপি

লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯২ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সামনের দিনগুলোতে আলোচনা চালিয়ে যেতে ‘সম্মত’ বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গতকাল শুক্রবার লেবাননের শেবা এলাকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একই পরিবারের নয়জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া লেবানন ও সিরিয়া সীমান্তে ইসরায়েলের বিমান হামলায় সিরিয়ার পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এ হামলা হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সানা এ কথা জানিয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সিরিয়া-লেবানন সীমান্তের একটি ক্রসিংয়ে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল। দেশটির দাবি, হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ ঠেকাতে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।

এদিকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন লেবাননের বাসিন্দারা। শুধু তা–ই নয়, অনেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায়ও আশ্রয় নিচ্ছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা গতকাল জানিয়েছে, ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ হাজার মানুষ সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই সিরীয় নাগরিক।

সিরিয়ায় ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি গোঞ্জালো ভারগাস ইয়োসা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যে তাঁরা এমন এক দেশে যাচ্ছেন, যে দেশটি ১৩ বছর ধরে সংঘাতের মধ্যে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আরও কত মানুষ একই পথ বেছে নেন, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’

আলোচনা চালিয়ে যেতে ‘সম্মত’ ইসরায়েল

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা চালিয়ে যাবে ইসরায়েল। গতকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ কথা জানিয়েছেন। চলমান সংঘাত আরও বাড়লে, উভয় দেশের বাসিন্দাদেরই নিজেদের বাসাবাড়িতে ফেরা কঠিন হবে—যুক্তরাষ্ট্রের এমন হুঁশিয়ারির পর এ মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর দপ্তর বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে একাধিক ইসরায়েলি টিম বৃহস্পতিবার কয়েক দফা বৈঠক করেছে। সামনের দিনগুলোতে এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্ররা লেবাননে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছিল। ১২টি দেশের শক্তিধর জোট অবিলম্বে লেবাননে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও কাতার ওই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের বৈঠকের পর এ যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।

তখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুদ্ধবিরতির খবর সত্য নয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীগুলোকে দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন