২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

তুরস্ক ও সিরিয়ায় শত বছরের ভয়াবহ দুর্যোগ: জাতিসংঘ

গৃহহীন হয়েছেন ৬৪ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ বলছে, এর মধ্যে শুধু সিরিয়ায় গৃহহীন প্রায় ৫৩ লাখ।

গৃহহারা মানুষের জন্য স্টেডিয়ামে তাঁবু খাটিয়েছে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সংস্থা। তীব্র শীতে আশ্রয়হীন মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। গত শুক্রবার তুরস্কের কাহরামানমারাস স্টেডিয়ামে।
ছবি: এএফপি

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ওই অঞ্চলে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশ শনিবার পরিদর্শন করে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। তিনি বলেছেন, এই দুর্যোগের মাত্রা এবং তা মোকাবিলায় যে তৎপরতা নেওয়া হয়েছে, সেটা নজিরবিহীন।

ভূমিকম্পে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই ২১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ভূমিকম্পে সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। শিশুকে কাপড়ে মুড়িয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এক নারী। গত শুক্রবার সিরিয়ার আলেপ্পোতে।
ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভূমিকম্পে শুধু সিরিয়াতেই প্রায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সিরিয়া প্রতিনিধি শিভাঙ্কা ধনপাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিরিয়ায় সংকটের ভেতরেই আরেক বড় সংকট এসেছে। দেশটিতে ভূমিকম্পে আনুমানিক ৫৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

সিরিয়ায় প্রায় ১২ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় বাস্তুচ্যুত লোকজন তুরস্ক সীমান্তে স্থাপন করা তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। এখন এসব তাঁবুতে দলে দলে ছুটে আসছে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষ। এসব মানুষের অধিকাংশই ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

এদিকে তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায়ের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ভূমিকম্পদুর্গত ১০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গত সোমবার তুরস্কের সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তুরস্কের ইতিহাসে ১৯৩৯ সালের পর এই ভূমিকম্পকে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বিবেচনা করা হচ্ছে।

অর্থসহায়তা চাইল ডব্লিউএফপি

সিরিয়া ও তুরস্কের ভূমিকম্পদুর্গতদের জন্য ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। দুই দেশের ভূমিকম্পদুর্গত ৮ লাখ ৭৪ হাজার মানুষের জন্য রেশন ও রান্না করা খাবার সরবরাহে এই অর্থসহায়তা চাওয়া হয়েছে।

বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটির রোম সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, জরুরি খাদ্য দরকার এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সিরিয়ায় নতুন করে গৃহহারা ২ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ আর তুরস্কের ৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ রয়েছেন। তুরস্কের এই ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৫ হাজার শরণার্থী আর ৫ লাখ ৪৫ হাজার অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু রয়েছেন। ডব্লিউএফপি জানায়, গত চার দিনে সংস্থাটি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে।

বিদ্রোহী এলাকায় ত্রাণকাজে সায়

সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ভূমিকম্পদুর্গত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মানবিক ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ার সব অংশে মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের সহায়তায় আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এবং সিরিয়ার রেড ক্রিসেন্ট যেন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় আইসিআরসির আঞ্চলিক পরিচালক ফাব্রিজিও কারবোনি এএফপিকে বলেন, ‘বেসামরিক লোকজনের দুর্ভোগ লাঘব করবে এমন যেকোনো পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।’

এদিকে দুর্গতদের মাঝে সহায়তা পৌঁছাতে সিরিয়ায় ‘অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক

প্রধান। শুক্রবার এক টুইটে তাঁর দপ্তর বলেছে, ‘তুরস্ক ও সিরিয়ার এই ভয়ানক সময়ে সাহায্য দরকার এমন সবাইকে জরুরি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক সিরিয়ায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবাধিকার ও মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবার কাছে সহায়তা পৌঁছাতে পারে।’