ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হুমকি
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মধ্যেই চলছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুমকি। গতকাল রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় হামলা বন্ধ না করলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করা যেতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সতর্কবার্তার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইরানকে সতর্ক করে বলেন, তাঁর লোকজন জীবনের জন্য যুদ্ধ করছেন। ‘করো বা মরো’ পরিস্থিতিতে তাঁরা এ লড়াই করছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালান। ওই হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া লেবাননের হিজবুল্লাহর অবস্থানেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইরান হিজবুল্লাহকে বরাবর সমর্থন জানিয়ে আসছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর এর অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজায় নির্বিচার বোমা হামলার পাশাপাশি গত রোববার উপত্যকাটিতে সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রক্সি ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলছি তারা যদি গাজায় অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বন্ধ না করে, তবে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এতে এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, এর ফল হবে তীব্র ও তিক্ত এবং আঞ্চলিক ও যারা যুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করছেন, তাঁদের জন্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে সুদূরপ্রসারী।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রমাণ করে গাজার চলমান সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি প্রক্সি যুদ্ধ, যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারাও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট সেনাদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ইরাকি ঘাঁটিতে ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মার্কিন সেনা ও নাগরিকদের ওপর আক্রমণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। এবিসি নেটওয়ার্কের দিস উইক অনুষ্ঠানে লয়েড অস্টিন সতর্ক করে বলেন, ‘যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো দেশ এই সংঘাতকে আরও বাড়াতে চায় বা এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়, তবে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এ পথে না হাঁটার।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত কোনো মার্কিন সেনার ওপর হামলা হলে তার বদলা নিতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত আছে। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে গত রোববার তিনি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরানের কারসাজিতে এ সংঘাত (ইসরায়েল-ফিলিস্তিন) ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনাদের ওপর কোনো হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এরই মধ্যে বিমানবাহী রণতরি ব্যবহার করে যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতাসম্পন্ন অতিরিক্ত দুটি সেনাদলও যুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জনগণের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। প্রয়োজন হলে আমরা নিশ্চিতভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব।’
গত রোববার নেতানিয়াহু ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের লেবানন সীমান্তে সেনাদের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সীমান্তে লেবাননভিত্তিক সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহ সেনাদের যুদ্ধে না জড়াতে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘এটা হবে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমরা অকল্পনীয় শক্তি দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হানব। এতে তাদের ও লেবাননের ধ্বংস ডেকে আনা হবে।’ হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে পুরোপুরি প্রস্তুত।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে গুলি বিনিময়ে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা ও একজন বেসামরিক ব্যক্তি।
এদিকে প্রতিবেশী সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোর বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইসরায়েল। এতে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রানওয়েতে ক্ষতি হওয়ায় দুটি বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে গেছে।
গুরুতর পরিস্থিতি দেখছে চীন
বড় ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটকে গুরুতর পরিস্থিতি হিসেবে দেখছে চীন। চীনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কূটনীতিক ঝাই জুনের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফররত ঝাই জুন বলেন, সংঘাত আঞ্চলিক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিস্তৃত হচ্ছে। ইতিমধ্যে লেবানন ও সিরিয়ার সীমান্তে তা ছড়িয়েছে। ঝাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক ও অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।