২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছোড়ার দাবি হামাসের, পাল্টা বিমান হামলা ইসরায়েলের
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে আজ শনিবার ইসরায়েলের দিকে একের পর এক রকেট ছোড়া হয়েছে। এতে কমপক্ষে একজন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক এবং চিকিৎসকেরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
পাল্টা জবাব দিতে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এএফপির সাংবাদিকেরা বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় অন্তত দুটি বিমান হামলা চালিয়েছে।
ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে নতুন অভিযানের অংশ হিসেবে রকেটগুলো ছুড়েছে তারা। প্রথম ২০ মিনিটের অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছে হামাস।
এএফপির সাংবাদিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, শুরুতে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গাজার বেশ কিছু এলাকা থেকে রকেট ছোড়া হয়। এরপর একনাগাড়ে রকেট ছোড়া হয়েছে। পুরো আকাশ যেন রকেটে ছেয়ে গিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দেশটির দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের এলাকাগুলোতে সতর্কসংকেত বাজিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রকেট হামলার আভাস দিয়েছে। বোমা থেকে বাঁচতে জনগণকে সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রকেট হামলার সময় জেরুজালেম শহরেও সতর্কসংকেত বাজানো হয়েছিল। সেখানে নিযুক্ত এএফপির এক সাংবাদিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, রকেটগুলো প্রতিহত করা হয়েছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা স্বীকার করেছে, তারাই রকেটগুলো ছুড়েছে। হামাস বলেছে, ‘আমরা দখলদারদের (ইসরায়েল) সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অবসানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের জবাবদিহি ছাড়াই তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়ার সময় শেষ হয়েছে। আমরা অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ঘোষণা করেছি। প্রথম ২০ মিনিটের অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছি।’
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, রকেট হামলার পাশাপাশি গাজা উপত্যকা থেকে সন্ত্রাসীরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশটিতে রকেট হামলার শিকার হয়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। তাঁর বয়স প্রায় ৬০ বছর।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, হামলায় আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্রুতই এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়।
গাজায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস। ২০০৭ সালে হামাস গাজায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসরায়েল উপত্যকাটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তখন থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ লড়াই হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গাজার কর্মীদের জন্য দুই সপ্তাহ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। আর তারই জের ধরে গাজা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে নতুন এ হামলা হলো।
ফিলিস্তিনি কর্মীদের জন্য ইসরায়েলি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, গাজায় কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় এসব কর্মী ইসরায়েলে গিয়ে ভালো উপার্জনের সুযোগ পান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আবারও সীমান্তটি খুলে দেওয়া হয়। তখন আশা করা হচ্ছিল, গাজায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় কমপক্ষে ২৪৭ জন ফিলিস্তিনি, ৩২ জন ইসরায়েলি এবং ২ জন বিদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও আছেন।