২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে গাজায়

উত্তরাঞ্চল থেকে সরে আসা ফিলিস্তিনিরা আরেক দফা বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। হামলার কারণে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না।

দাতব্য সংস্থার বিতরণ করা খাবার সংগ্রহ করছে শিশুরা। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। উত্তর গাজার পর দক্ষিণ গাজায়ও বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উত্তরাঞ্চল থেকে সরে আসা ফিলিস্তিনিরা আরেক দফা বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। বিরামহীন হামলার কারণে ত্রাণসহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

গতকাল বুধবার ছিল গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ৬১তম দিন। আগের ২৪ ঘণ্টা ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।

অন্যদিকে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩২০ জনের মতো সেনা রয়েছেন। এ ছাড়া গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে আরও ৮০ জনের মতো ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।

‘আমরা দিনে এক বেলা খাই’

গাজায় ইসরায়েলি হামলা তীব্রতর হওয়ায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের বড় একটি অংশই শিশু।

ইসরায়েলের বিরামহীন হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের কাছে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো না গেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, ‘নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ার ফলে ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ত্রাণকর্মীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে বেসামরিক সাধারণ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। গাজায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল হলো এই ত্রাণের খাদ্যশস্য।’

ডব্লিউএফপি বলেছে, ‘আমাদের কর্মীদের জন্য গাজা ভূখণ্ডে নিরাপদ, বাধাহীন ও দীর্ঘকালীন যাতায়াতের ব্যবস্থা চাই। তাহলেই তারা মানুষের কাছে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে। একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হলেই এ মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব।’

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য নেই। পান করার মতো সুপেয় পানিও বাসিন্দারা পাচ্ছেন না।

পাঁচ সন্তানের মা নেভেন হাসান বলেন, ‘আমরা দিনে এক বেলা খাই। বেশির ভাগ সময়ই ছোট এক টুকরা রুটি আর টিনের কৌটায় প্রক্রিয়াজাত করা মটরশুঁটি খেয়ে কাটে।’

এই মা আরও বলেন, ‘আমার ছয় মাসের বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়েদের সবাই অসুস্থ। তাদের দূষিত পানি পান করতে হচ্ছে। শীত কাটানোর মতো কোনো কম্বলও আমরা পাইনি।

‘মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতি’

গাজার পরিস্থিতি মহাবিপর্যয়কর হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ফলকার টুর্ক। গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘চূড়ান্ত বিভীষিকাময়’ পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। পর্যাপ্ত খাবার নেই। মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর মতো অবস্থা নেই।

ফলকার টুর্ক গতকাল বলেন, গাজার বাস্তুচ্যুত ১৯ লাখ মানুষকে দক্ষিণ গাজার ছোট্ট একটি এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেখানে তাঁদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। গোটা পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর।

জাতিসংঘ মানবাধিকারপ্রধান আরও বলেন, ‘মানবিক সহায়তার সঙ্গে যুক্ত আমার সহকর্মীরা পরিস্থিতিকে মহাবিপর্যয়কর বলে অভিহিত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ বিপর্যয় সম্পূর্ণভাবে অনুমিত ছিল এবং এটা প্রতিরোধ করা যেত।’

এদিকে গাজার পরিস্থিতি প্রতি মিনিটে অবনতি হচ্ছে জানিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনে ত্রাণসহায়তাবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গোটা গাজা উপত্যকা এখন বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে।

সাংবাদিকের পরিবারের ২১ সদস্য নিহত

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক মোনিম আল-আশরাফের পরিবারের ২১ সদস্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় তাঁদের আশ্রয় নেওয়া বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।

হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আল-জাজিরা প্রতিনিধির মা–বাবা, ভাই-ভাবি, ভাতিজা-ভাতিজিরা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করা যায়নি বলেও জানান মোনিম।

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আল-জাজিরা অ্যারাবিকের প্রধান প্রতিবেদক ওয়ায়েল আল-দাহদুহের পরিবারের কয়েক সদস্য নিহত হন।