ইসরায়েলে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা করা হয়নি, দাবি হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার

হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের পক্ষ থেকে দেশটির বেসামরিক মানুষদের হত্যা করা হয়নি, তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি—এমনটাই দাবি করেছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক। তিনি বলেন, সেদিন শুধু ‘তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের’ ওপর হামলা করা হয়েছিল।

আবু মারজুক হামাসের উপরাজনৈতিক প্রধান। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে আবু মারজুক দাবি করেছেন, ইসরায়েলে হামলার সময় নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষদের এড়িয়ে গেছে হামাস।

যদিও ইসরায়েলের দাবি ভিন্ন। দেশটি জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামলায় দেশটিতে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। এমনকি হামলার সময় নিরস্ত্র ব্যক্তি ও শিশুদের ওপর হামাস সদস্যদের গুলি করার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন

৭ অক্টোবরের হামলার পর বিবিসিকে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা আবু মারজুক গত শনিবার এ সাক্ষাৎকার দেন। বিবিসি জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের আওতায় যুক্তরাজ্যে আবু মারজুকের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলিদের বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে আবু মারজুকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে আবু মারজুক বলেন, ‘আমরা আটক করা ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে চাই। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটি যুদ্ধ থামাক, আমরা তাদের মুক্তি দেব।’

আবু মারজুক সম্প্রতি মস্কো সফর করেছেন। বিবিসি জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস সদস্যদের হাতে আটজন রুশ-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক আটক হয়েছেন। তাঁদের মুক্তির কৌশল খুঁজতে তাঁর এ মস্কো সফর।

গাজায় হামাসের সদস্যরা দুই রুশ নারীকে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার কারণে শেষ পর্যন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন আবু মারজুক। যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইসরায়েলিরা যুদ্ধ থামায়, তাহলে আমরা তাদের (আটক হওয়া ব্যক্তিদের) রেডক্রসের হাতে তুলে দিতে পারি।’

আরও পড়ুন

আবু মারজুক দাবি করেন, ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের সামরিক শাখা কাসেম বিগ্রেডের কমান্ডার মোহাম্মদ আল-দেইফ স্পষ্টতই বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আল-দেইফ তাঁর যোদ্ধাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনো নারী, কোনো শিশু ও কোনো বয়স্ক ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবু মারজুক দাবি করেন, ওই দিনের হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনারা। নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষদের এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত এক মাসে সেখানে নারী ও শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। ইসরায়েলি হামলা থেকে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, শরণার্থীশিবির—কিছুই বাদ যায়নি।

হামাসের রাজনৈতিক শাখা পরিচালিত হয় কাতার থেকে আর সামরিক শাখা ফিলিস্তিনের গাজা থেকে। বিভিন্ন সময় সংগঠনটির এ দুই শাখার মধ্যে মতপার্থক্যের কথাও শোনা গেছে। বিবিসি আবু মারজুকের কাছে জানতে চায়, ইসরায়েলে হামলা করার আগে এর প্রস্তুতি সম্পর্কে রাজনৈতিক শাখা জানত কি না? জবাবে আবু মারজুক বলেন, সব সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করার কোনো প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন

হামাসের রাজনৈতিক শাখাকে ২০২১ সালে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য সরকার। তখন বলা হয়েছিল, হামাস জটিল প্রক্রিয়ায় পরিচালিত একটি একক সন্ত্রাসী সংগঠন।

এদিকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার জ্যেষ্ঠ নেতা আবু মারজুককে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, আবু মারজুক হামাসের রাজনৈতিক কার্যক্রমের সমন্বয় ও অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত।