‘নেতানিয়াহু ইসরায়েলের বড় শত্রু’: ইসরায়েলে টানা তৃতীয় দিন ব্যাপক বিক্ষোভ
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা শেন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত এবং গাজায় আবার হামলা শুরুর প্রতিবাদে গতকাল শনিবার রাজধানী তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে গোয়েন্দা তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার গোয়েন্দাপ্রধান রোনেনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেন, তিনি রোনেন বারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালে গোয়েন্দা সংস্থা শেন বেতের প্রধান হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রোনেনের বরখাস্তের আদেশ আগামী ১০ এপ্রিল কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়।
নেতানিয়াহু সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই টানা তিন দিন ধরে ইসরায়েলে বিক্ষোভ চলছে।
ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট গত শুক্রবার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে আদেশ জারি করেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিনি এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।
সমালোচকেরা বলছেন, রোনেন বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও এগুলোর ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে চাইছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত মঙ্গলবার গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস ও ইসরায়েলের হাতে বন্দীদের মুক্তির জন্য হওয়া ওই চুক্তি গাজাসহ ওই অঞ্চলে খানিকটা স্বস্তি বয়ে এনেছিল।
ইসরায়েলের নীল–সাদা পতাকা হাতে তেল আবিবের হাবিমা স্কয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নেন। তাঁরা গাজায় হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলের বাকি ব্যক্তিদের মুক্ত করে আনতে নতুন করে চুক্তি করার দাবি জানান।
প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মোশে হাহারোনি (৬৩) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ভয়ানক শত্রু হচ্ছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০ বছর ধরে তিনি আমাদের দেশকে গ্রাহ্য করেননি, আমাদের দেশের নাগরিকদের গ্রাহ্য করেননি।’
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরুর পর থেকে হামাসের হাতে বন্দী ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও সমর্থকেরা প্রায় নিয়মিত বিক্ষোভ করে আসছেন। ওই সব বিক্ষোভ সমাবেশে নানা সময়ে নেতানিয়াহু সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারী ইরেজ বারম্যান (৪৪) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা দেড় বছর পর আবারও গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ দেখছি। এখনো গাজার ক্ষমতায় হামাস। এখনো ওই সংগঠনের হাজার হাজার যোদ্ধা রয়ে গেছে। সুতরাং এই যুদ্ধে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার তার লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’
ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর ফলে গাজায় বন্দী ৫৯ ইসরায়েলির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ইসরায়েলি বন্দীর মধ্যে এখনো ২৪ জন জীবিত রয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা শুরুর পর ওই সব বন্দী হয় হামাসের হাতে নিহত হবেন অথবা দুর্ঘটনবশত ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় তাঁদের প্রাণ যাবে।
নেতানিয়ানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা অফির ফক রয়টার্সকে বলেন, ‘হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে আমাদের যা করার দরকার, আমরা তা–ই করব।’
অফির ফক বলেন, ‘হামাস সামরিক চাপের বিষয়টি বুঝতে পারছে। একমাত্র সামরিক চাপেই তারা কাবু হবে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই সামরিক চাপকে কাজে লাগিয়ে ৮০ জন জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে। একমাত্র সামরিক চাপের কারণে তারা আলোচনা টেবিলে এসেছে। আর এখন আমরা আবার সেই কাজটিই করছি।’