ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা এমন একটি বিষয়, যা দুই দেশের জন্যই উদ্বেগের। আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান অটুট রয়েছে। আর ভারত বুঝতে পারছে, যে ঘটনা ঘটেছে, দেশগুলো নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তা করেছে।
পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানের হামলার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ইরান ও পাকিস্তানের বিষয়। তবে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটুট আছে। আমরা বুঝতে পারছি, আত্মরক্ষার্থে এমনটা করা হয়েছে।’
গতকাল বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ তাদের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের এমন লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে।
পরে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বেলুচিস্তান প্রদেশে সীমান্তবর্তী পাঞ্জগুর শহরে ওই হামলা চালানো হয়েছে। বেলুচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে ইরানের প্রায় এক হাজার কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত আছে।
ইরানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বার্তা সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ আল-আদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি ঘাঁটি নিশানা করে এ হামলা চালায় ইরান।
এ নিয়ে গত কয়েক দিনে তৃতীয় কোনো দেশে হামলা চালাল ইরান। এর আগে ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে দেশটি। ইরাকের কুর্দিস্তানে মোসাদের সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)।
পরে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় জয়েশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে ১১ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছিল সংগঠনটি।
এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছি। আমরা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আপস করতে কিংবা খেলতে দিতে পারি না।’
এদিকে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। এর আগে ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সব বৈঠক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ।