১৫ বছরে ছয়বার যুদ্ধের কবলে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে অবরুদ্ধ এ উপত্যকায়। এতে গাজায় প্রায় ৮ হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। তবে গাজাবাসী এই প্রথম যুদ্ধের মুখে পড়েছে, তা নয়। বিগত ১৫ বছরে এ নিয়ে ছয়বার যুদ্ধের মুখে পড়তে হয়েছে ফিলিস্তিনিদের।
২০০৭ সালে গাজায় শাসনক্ষমতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় জল, স্থল, আকাশপথে অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। এক বছর পর ২০০৮ সালে গাজায় প্রথম যুদ্ধ বাধে। এরপর ২০১২, ২০১৪, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে যুদ্ধ হয়েছে।
২০০৮
হামাস যোদ্ধাদের হত্যায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করেন ইসরায়েলি সেনারা। এর জেরেই বাধে যুদ্ধ। ইসরায়েলি বাহিনী এর নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন কাস্ট লিড’। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বোমা বর্ষণের পাশাপাশি উপত্যকায় ঢুকে আগ্রাসনও চালায়। এ যুদ্ধে অন্তত ১ হাজার ফিলিস্তিনি ও ১২ ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়া গাজায় চলে ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ। গাজার অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
২০১২
টানা আট দিন গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডসের প্রধান নিহত হন। আরও অন্তত ১৮০ জন প্রাণ হারান।
২০১৪
যুদ্ধবিমান থেকে গাজায় বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকা থেকে গাজায় কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। ইসরায়েলি হামলায় ২ হাজার ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক। ইসরায়েল দাবি করে, হামাসের পাল্টা হামলায় তাদের ৬৭ সেনা ও ৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
২০২১
এ বছর গাজায় বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুজালেমের শহরতলি শেখ জারা থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের হুমকি ও পবিত্র রমজান মাসে আল-আকসা মসজিদে যাওয়ায় ইসরায়েল নিষেধাজ্ঞা দিলে এ সহিংসতা শুরু হয়। গাজায় বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে গাজায় ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
২০২২
গত বছর গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। এর জবাবে হামাসও পাল্টা হামলা চালায়। টানা তিন দিন চলা এ যুদ্ধে অন্তত ১৪৪ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ১৫টি শিশুও ছিল।
২০২৩ (চলমান)
হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েল থেকে দুই শতাধিক মানুষকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। হামাসকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়ে সেদিনই গাজায় পাল্টা নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল এবং গাজায় পূর্ণ অবরোধ দেয়। এতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় গত ২৩ দিনে ৮ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৮টি শিশু এবং ২ হাজার ১৩৬ জন নারী রয়েছেন।