গাজায় পুরোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলের পর গতকাল সোমবার দক্ষিণেও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনী সেখানকার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এবার স্থল অভিযান ঘিরে গাজার বাসিন্দাদের মিসরের সিনাই উপত্যকায় পাঠানোর পুরোনো আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাজায় নতুন করে হামলা শুরু হলে সেখানকার বাসিন্দাদের সিনাইয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতিকেরা। তবে আরব দেশগুলো এ বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
সংঘাত অবসানে ২১ অক্টোবর কায়রোয় শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে মিসর। এতে ফিলিস্তিনিদের সিনাই অঞ্চলে সরে যেতে ইসরায়েলি নেতাদের নির্দেশের প্রতিবাদ করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা যাবে না বা তাঁদের ভূখণ্ড থেকে সরানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সরব না।’
ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর গতকাল নাগাদ গাজায় প্রায় ১৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১৮ লাখ বাসিন্দা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মোট জনসংখ্যা ২২ লাখের মতো।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ চেরকাবি আল-জাজিরাকে বলেন, নতুন করে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান গাজা উপত্যকাকে জনশূন্য করার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আসল পরিকল্পনারই অংশ।
চেরকাবি বলেন, ‘এটি গাজায় কেবল হতাহত বা হামাসকে শত্রু হিসেবে নেওয়ার মতো ছোটখাটো বিষয় নয়। বরং আমরা গাজা উপত্যকার ভূরাজনীতিকে নতুন করে কীভাবে দেখতে পারি, সে রকম বড় একটি বিষয়।’
এই অধ্যাপক বলেন, নেতানিয়াহু এখনো বিশ্বাস করেন যে তিনি কিছু ফিলিস্তিনিকে সিনাইয়ে ঠেলে দিতে পারবেন। আর কিছুসংখ্যককে দখল করা পশ্চিম তীর বা জর্ডানে পাঠাতে পারবেন।
চেরকাবি বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর (নেতানিয়াহুর) আসল পরিকল্পনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি। আমার মনে হয়, নতুন উচ্চতায় পৌঁছানো এই হত্যাযজ্ঞ ক্রমশ আরও বাড়বে।’
এই অধ্যাপক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ইসরায়েলকে তেমন চাপ দিচ্ছে না। বিশেষ করে তেলআবিব সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের পর তা–ই মনে হয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, পরবর্তী ধাপের অভিযানে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে। যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন কিছুই বলছে বলে মনে করেন চেরকাবি।
এদিকে যুদ্ধ–পরবর্তী গাজার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার। হোয়াইট হাউস এ কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফিল গর্ডন প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদলটি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমলা হ্যারিস। বৈঠকে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করাকে সমর্থন করবে না যুক্তরাষ্ট্র।